সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী : যে ১০ টি গুণ না থাকলে আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন না

উদ্যোক্তা কি ?

সাধারণভাবে উদ্যোক্তা বলতে আমরা বুঝি নিজের উদ্ভাবিত আইডিয়া বা  কোনো পরিকল্পনা বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য সচেষ্ট হওয়া। উদ্যোক্তা মূলত ব্যবসায়ের সাথে জড়িত । উদ্যোক্তা কে আমরা আত্মকর্মসংস্থান এর সাথে তুলনা করতে পারে অর্থাৎ একজন মানুষের আত্ম-কর্মসংস্থানের সাথে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসা সংক্রান্ত সকল ধরনের কার্যক্রম জড়িত।

রিচার্ড ক্যানিয়ন এর মতে একজন উদ্যোক্তা একটি লক্ষ্য কে সফল করার উদ্দেশ্যে কাজ করে এবং তার মূল লক্ষ্য থাকে পন্য ও গ্রাহকের মধ্যে কোন কিছু নতুনত্ব নিয়ে আসা।

 ফরাসি অর্থনীতিবীদ ব্যাপটিস্ট, যিনি প্রথম ১৮০০ সালে উদ্যোক্তা  শব্দের অন্যতম প্রবর্তক। তাঁর মতে, উদ্যোক্তা হচ্ছে এমন একজন যিনি সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। যিনি অর্থ শ্রম ও পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে পণ্যের মধ্যে নতুনত্ব খুঁজে বের করেন।

উদ্যোক্তার সাথে সকল প্রকার ঝুঁকি ও আত্ম প্রতিষ্ঠা হওয়ার যে প্রচেষ্টা সেটা জড়িত আর একজন উদ্যোগী উদ্যোক্তা সবসময় তার অর্থ শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করে ব্যবসা সফল করার জন্য। সে অর্থে আমরা সংক্ষেপে বলতে পারি, উদ্যোক্তা হচ্ছেন তিনি যিনি তাঁর আইডিয়া বা  পরিকল্পনাকে ব্যবসায় রূপ দেওয়ার জন্য সকল প্রকার ঝুঁকি গ্রহণ করেন এবং মেধা ও শ্রম ও অর্থের বিনিয়োগ করেন।

সফল উদ্যোক্তা গুণাবলী
সফল উদ্যোক্তা গুণাবলী

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে কি কি গুণাবলী থাকতে হয়?

Management System International (MSI)-এর গবেষক David Mc. Lelland -র নেতৃতে এক দল গবেষক বিশ্বব্যাপী ব্যাপক গবেষনায় জানতে পেরেছে যে মোট ১০ টি প্রধান বৈশিষ্ট কোন ব্যক্তিকে সফল উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করে –

১. সুযোগ সন্ধান: ব্যবসা সংক্রান্ত নতুন নতুন সুযোগ দেখা । এ গুলির উপর কাজ করা এবং তা বাস্তবায়ন করা । আর্থিক সংস্থান, যন্ত্রপাতি, জমি, কর্মসংস্থান বা অন্যান্য সাহায্য লাভের জন্য লক্ষ্যনীয় সুযোগ গুলি ব্যবহার করা ।

২. অধ্যবসায়: যে কোন বাঁধা দূর করা অথবা যে কোন চ্যালেনজ মোকাবিলা করতে বার বার পদক্ষেপ নেয়া। লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য বিকল্প পথ সন্ধান করা।

৩. কাজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা: গ্রাহকদের জন্য কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে উদ্ভুত সমস্যাবলীর দায়-দায়িত্ব নেয়া। শ্রমিকদের সাথে কাজে লেগে থাকা এবং তাদের মাধ্যমে কাজগুলি করিয়ে নেয়া যাতে গ্রাহকগণ সর্বদা সন্তুুষ্ট থাকেন।

৪. গুনগতমান ও দক্ষতার চাহিদাঃ  উন্নত, দ্রুত এবং সস্তায় পন্য সরবরাহের জন্য পথ খুজে বের করা। অতীতের সকল উৎকর্ষতাকে হার মানিয়ে নতুন এবং সবচাইতে ভালো খরিদ্দার যে রকম চায় সেই রকম ভাবে পন্য তৈরীর চেষ্টা করা ।

৫. ঝুঁকি গ্রহনঃ ঝুঁকি গ্রহন করার মনোভাব থাকতে হবে । একজন সফল উদ্যোক্তার  নিজের মত অনুযায়ী সহনীয়/পরিমিত ঝুঁকি গ্রহন করবে।

৬. তথ্য অনুসন্ধান: ব্যক্তিগতভাবে গ্রাহক, সরবরাহকারী ও প্রতিযোগী সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করা । তথ্য সংগ্রহের জন্য নিজের এবং ব্যবসায়িক বিভিন্ন ব্যক্তি বা নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো

৭.   লক্ষ্য নির্ধারন: পরিস্কার ও দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারন  করা । একজন সফল উদ্যোক্তা দীর্ঘমেয়াদী  লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা করা ।

৮. সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পরিচালনা: লক্ষে পৌছানোর জন্য বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা করা এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত করা। বড় কোন কাজকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে ছোট ছোট অংশে করে ফেলা ।

৯. উদ্বুদ্ধকরণ ও সম্পর্কস্থাপন: অন্যকে অনুপ্রাণিত বা প্রভাবিত করতে সঠিক কৌশল ঠিক করা । নিজের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত যোগসূত্রসমূহ ব্যবহার করা ।

১০.  আত্মবিশ্বাসঃ নিজের ক্ষমতা ও যাবতীয় গুনাবলীর উপর শক্ত বিশ্বাস রাখা । কোন কঠিন কাজ বা চ্যালেন্জ মোকাবিলা করার জন্য নিজের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখা ।

আরও যে সব উদ্যোক্তার গুণাবলী আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে 

  • সৃজনশীলতা (Creativity):
    – সৃজনশীলতা হলো উদ্যোগী মানসিকতা, যা সমস্যা সমাধান এবং নতুন আইডিয়া বা পণ্য তৈরির জন্য প্রস্তুতির ক্ষমতা।
  • নিজেকে বিশেষজ্ঞ করা (Expertise)
    – একজন উদ্যোক্তা তাদের ক্ষেত্রে ভাল অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জন করতে চায়, যাতে তারা তাদের ব্যবসায়ে প্রকৌশল দেখাতে পারেন।
  • লীডারশীপ ক্ষমতা (Leadership Skills):
    – একজন উদ্যোক্তা দক্ষ নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করতে হতে পারে যা তাদের দলের নির্দেশক হিসেবে পরিচিত হতে সাহায্য করে।
  • ধৈর্য্য (Patience):
    – উদ্যোক্তারা বাধ্য হতে পারে সময় ও উপাধির জন্য ধৈর্যশীল থাকতে হবে, কারণ ব্যবসায়ে সাফল্য একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া হতে পারে।
  • যোগাযোগ (Networking):
    – উদ্যোক্তা সক্রিয়ভাবে সামাজিক এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে যাতে তারা আগামীকালের জন্য উপকারী সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।
  • রিস্ক নেবার ক্ষমতা (Risk Taking):
    – উদ্যোক্তারা সাধারিতা ছাড়াই রিস্ক নেয়া এবং নতুন আসলেই বৃদ্ধি হতে হয়।
  • টিম ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা (Team Management):
    – ব্যবসায়ে উদ্যোক্তারা টিম ম্যানেজমেন্ট এবং সহযোগিতা ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন যাতে তাদের দল সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
  • সহযোগিতা (Collaboration):
    – উদ্যোক্তা অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে সহযোগিতা করতে সাজানো হতে পারে যাতে তাদের উদ্যোগ সফল হতে পারে।
  • সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা (Problem Solving):
    – আপনার সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা থাকতে হবে।

 

সফল উদ্যোক্তা

 

সফল উদ্যোক্তা উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়

আপনার লক্ষ্য সুস্পষ্ট হতে হবেঃ  আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে হলে আপনার সুস্পষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার নিজের ভিতর উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকতে হবে কারণ আমরা শুরুর ক্ষেত্রে অনেক ধরনের বিচার বিশ্লেষণ করি কিন্তু উদ্দীপনা বা উৎসাহ না থাকার কারণে তা কিছুদুর যাওয়ার পর পরেই থেমে যায়, আর এভাবেই সমাপ্ত হয় অনেক উদ্যোক্তার গল্প।

 কঠোর পরিশ্রম করুনঃ আপনাকে ভাগ্যের উপর নির্ভর না করে, নিজের উপর নির্ভর করতে হবে । কঠোর পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে হবে। আপনাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান, সাফল্য একদিন ঠিকই আপনার হৃদয় ছুয়ে যাবে।

লক্ষ্য অর্জনে অটল থাকুনঃ আসলে লক্ষ্য অর্জনের জন্য লেগে থাকাটা খুবই জরুরী, আপনি যদি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে কোন কাজে হাত দে্‌ তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর যদি সফল নাও হতে পারেন তাহলে কাজটা ছেড়ে না দিয়ে বারবার চেষ্টা করাটা জরুরি, আপনি জানেন সাঁতার শিখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পানিতে নামতে হবে আর পানিতে নামলেই কিন্তু সাঁতার শেখা যায় না বারবার চেষ্টা হলে ব্যর্থতাকে বরণ করে নতুন করে উদ্যমী হয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে তারপরে সফল হতে হয়।

টিম পরিচালনায় দক্ষ হতে হয়ঃ একজন মানুষ কিন্তু সব বিষয়ে দক্ষ হয় না কিন্তু ব্যবসা এমন একটি বিষয় যেখানে আপনাকে বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা নিতে হবে, আর সে কাজটি করতে হলে আপনাকে টিম পরিচালনায় দক্ষ হতে হবে। আর টিম পরিচালনায় দক্ষতা জন্য আপনার মধ্যে যে গুণটি বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে অন্যকে উৎসাহিত করার ক্ষমতা যেটাকে আমরা বলে থাকি মোটিভেশনাল স্কিল।

 প্রতিদান দিতে শিখুনঃ আসলে আপনি যদি পেতে চান, তাহলে আপনাকে আগে দিতে শিখতে হবে। যদি আপনি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিমাণ দিতে পারেনা তাহলে প্রতিদান হিসেবে আপনি পেতে পারেন অনেক বেশি। প্রতিদিন আপনি চারপাশের মানুষকে ভালবাসতে শিখুন, তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রতিদান দিন প্রাকৃতিক ভাবেই আপনিও রিটার্ন পাবেন অপ্রত্যাশিতভাব। আপনার অনেক কাজ সহজ হবে। 

আরও পড়তে পারেন…সফল উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়

Leave a Comment