ক্রেতা সুরক্ষা অধিকার নিশ্চিত করবেন কিভাবে?

ক্রেতা (ভোক্তা) সুরক্ষা অধিকার

মানুষের জন্ম থেকে মুত্যু পর্যন্ত অভাবের শেষ নেই। মানুষ তার অভাব পুরণের জন্য নানাবিধ পণ্য ক্রয় করে থাকে। বিপণনের ক্ষেত্রে একটি কথা বলা হয়ে থাকে যে, ক্রেতাই রাজা। কিন্তু আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাগণ নানা ভাবে ক্রেতাগণ কে হয়রানি বা ঠকানোর চেষ্টা করে থাকে।

আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক আন্দোলন শুরু হয় আমেরিকাতে। ১৯৩০ সালে মহামন্দার সময় কয়েকজন সমাজ সচেতন লেখকদের লেখার সুত্র ধরে ১৯৩৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গঠিত হয় ভোক্তা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন নিজস্ব ল্যাবরেটরীতে পণ্যের ক্ষতিকর ও ত্রুটিপূর্ণ দিক পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে নিজস্ব প্রকাশনা কনজুমারস রিপোর্ট-এ প্রকাশের ব্যবস্থা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তার অধিকার সংক্রান্ত এ আন্দোলন ধীরে ধীরে সারা ইউরোপ ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত মাল্টিন্যাশনাল মনিটর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক সদস্য রালফ নাদের-কে বিশ্ব ক্রেতা-ভোক্তা আন্দোলনৈর অগ্রণী নায়ক বলা হয়ে থাকে।

১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ সার্বেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির উদ্যোগে মার্কিন কংগ্রেসের ক্রেতা/ভোক্তাগণের চারটি অধিকার স্বীকৃতি লাভ করে। তা’হলো- ক. নিরাপত্তার অধিকার, খ. তথ্য হবার অধিকার, গ. ন্যায্যমূল্যে পছন্দসই পণ্য বা সেবা ভোগের অধিকার, ঘ. অভিযোগ করা এবং প্রতিনিধিত্বেও অধিকার। ১৯৭৭ সালের আগষ্টে জাতিসংঘের আর্থিক ও সামাজিক কাউন্সিলে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ প্রস্তাব পাস হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণে ৮টি অধিকার ও ক্রেতাগণের পালনীয় ৫টি দায়িত্বের স্বীকৃতি প্রদান করে একটি ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ নির্দেশিকা গৃহীত ও অনুমোদিত হয়।

জাতিসংঘ স্বীকৃত ক্রেতা-ভোক্তাগণের অধিকার ও দায়িত্ব নিম্নরূপ

৮টি অধিকারঃ
০১. অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা পুরনের অধিকার।
০২. নিরাপদ পণ্য ও সেবা পাবার অধিকার।
০৩. পণ্যের উপাদান, ব্যবহারবিধি, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি জানার অধিকার।
০৪. ন্যাজ্য মূল্যে সঠিক পণ্য ও সেবা পাবার অধিকার।
০৫. অভিযোগ করার ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার।
০৬. কোন পণ্য বা সেবা ব্যবহাওে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতিপূরণ পাবার অধিকার।
০৭. ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার।
০৮. স্বাস্থকর পরিবেশে কাজ ও বসবাস করার অধিকার।

০৫ (পাঁচ) টি দায়িত্বঃ
০১. পণ্য বা সেবার মান ও গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতন ও জিজ্ঞাসা করতে হবে।
০২. দরদাম করে সঠিক পণ্যটি বাচাই করুন।
০৩. আপনার আচরণে অন্য ক্রেতা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হন সে ব্যাপারেও সচেতন থাকুন।
০৪. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতন ও সক্রিয় হোন।
০৫. ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে অধিকার সংরক্ষণে সোচ্চার ও সংগঠিত হোন।

বাংলাদেশে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ

আন্তুজার্তিক ক্রেতা-ভোক্তা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ কওে ১৯৭৮ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ  প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ক্যাব সরকার অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও এনজিও এ্যঅফেয়ার ব্যুরোতে নিবন্ধীকৃত। একই সংগে আন্তাজার্তিক ক্রেতা-ভোক্তা প্রতিষ্ঠান এর সদস্য। এর প্রধান কার্যালয় লন্ডনে অবস্থিত।

বাংলাদেশে ক্যাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে এসে তৈরী হয় খসরা ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন। কিন্তু, আজও এটি চুড়ান্ত রূপ লাভ করেনি।

ক্যাবের কার্যক্রমঃ
০১. ক্রেতা-ভোক্তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন ও অবহিত করা।
০২. পণ্যের মান, মূল্য ও ওজনের কারচুপি রোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলা।
০৩. বাণিজ্য ও অর্থনীতি।
০৪. নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা।
০৫. স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও ঔষধ।
০৬. সুশাসন ও সামাজিক ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা।

Leave a Comment