নকশি কাঁথা বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এটি কেবল গ্রামীণ নারীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং আজ এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। যারা ঘরে বসে কাজ করে আয় করতে চান, তাদের জন্য ফুটিয়া কাঁথা একটি দারুণ সুযোগ হতে পারে। সামান্য বিনিয়োগ, সৃজনশীলতা, এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মাসে ৩০,০০০ টাকার বেশি আয় সম্ভব।
এই প্রবন্ধে আমরা দেখব কীভাবে কাঁথার ব্যবসা শুরু করবেন, এর বাজার চাহিদা এবং ঘরে বসে কীভাবে এই ব্যবসা থেকে আয় করা যায়।
নকশি কাঁথার ইতিহাস
ফুটিয়া কাঁথার ইতিহাস খুবই পুরনো। এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের দ্বারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে তৈরি হয়ে আসছে। ঐতিহাসিক প্রমাণ সূচিত করে যে, মুঘল আমলেই কাঁথার উৎপত্তি ঘটে। সে সময় নারীরা ঘরের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাঁথা তৈরি করতেন। ধীরে ধীরে এটি একটি জনপ্রিয় হস্তশিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বাংলাদেশে প্রচলিত নাম:
- নকশি কাঁথা: সবচেয়ে প্রচলিত নাম, যার অর্থ নকশা করা কাঁথা।
- কাঁথা: সাধারণত কাঁথা বলতে এ কাঁথাকেই বোঝায়।
- ফুটিয়া কাঁথা: কারণ, কাঁথার উপর নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।
- সুতার কাজ: কাঁথা তৈরির কাজকে সুতার কাজও বলা হয়।
- হাতের কাজ: হাত দিয়ে তৈরি করা হওয়ায় একে হাতের কাজও বলা হয়।
অন্যান্য দেশে প্রচলিত নাম:
- প্যাচওর্ক কুইল্ট: ইংরেজিতে এ কাঁথাকে প্যাচওর্ক কুইল্ট বলা হয়।
- এমব্রয়েডারি কুইল্ট: কারণ,কাঁথার উপর নকশা করা হয়।
- হ্যান্ডেমেড কুইল্ট: হাতে তৈরি করা হওয়ায় একে হ্যান্ডেমেড কুইল্টও বলা হয়।
নকশি কাঁথা ব্যবসার ভিত্তি
ফুটিয়া কাঁথা মূলত পুরোনো কাপড় এবং রঙিন সুতার সংমিশ্রণে তৈরি একটি সূচিকর্ম। এটি তৈরি করতে খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। গ্রামীণ নারীরা সাধারণত তাদের অবসর সময়ে কাঁথা তৈরি করেন। তবে বর্তমানে এই শিল্প ব্যবসার রূপ নিয়েছে, এবং এর চাহিদা এখন শুধু স্থানীয় বাজারে সীমাবদ্ধ নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও ব্যাপক।
ঘরে বসে ব্যবসা শুরু করার ধাপ
১. প্রাথমিক প্রস্তুতি:
শিখুন ও পরিকল্পনা করুন: ফুটিয়া কাঁথা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে অনলাইনে ভিডিও দেখে বা স্থানীয় কারিগরদের থেকে শিখতে পারেন।
উপকরণ সংগ্রহ করুন: পুরোনো কাপড়, রঙিন সুতার কাঠি এবং সূচি দিয়ে শুরু করতে পারেন।
ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করুন: প্রথমে ছোট আকারের পণ্য তৈরি করুন, যেমন কুশনের কাভার, টেবিল রানার বা ওয়াল হ্যাংগিং।
২. ডিজাইন তৈরি করুন:
বিভিন্ন ধরনের নকশা (ফুল, পাতা, গ্রামীণ দৃশ্য) তৈরি করুন।
নতুন ডিজাইন আনতে ইন্টারনেট বা ম্যাগাজিন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের ফুটিয়া কাঁথা
কাঁথার বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেমন:
- তামানি কাঁথা: সবচেয়ে সাধারণ ধরনের কাঁথা। এতে বিভিন্ন রঙের সুতো দিয়ে জ্যামিতিক নকশা করা হয়।
- গাছের কাঁথা: এই ধরনের কাঁথায় বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতা, ফুল এবং ফলের নকশা করা হয়।
- পাখির কাঁথা: এই কাঁথায় বিভিন্ন ধরনের পাখির ছবি আঁকা হয়।
- মানুষের কাঁথা: এই কাঁথায় মানুষের চিত্র আঁকা হয়।
- জ্যামিতিক কাঁথা: এই কাঁথায় বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতির নকশা করা হয়।
- ফুলের কাঁথা: এই কাঁথায় বিভিন্ন ধরনের ফুলের নকশা করা হয়।
ফুটিয়া কাঁথা তৈরির পদ্ধতি
সুতার কাজ তৈরি একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। প্রথমে সুতোকে রঙ করা হয়। তারপর সুতো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নকশা বুনে কাঁথা তৈরি করা হয়। সুতার কাজ তৈরি করতে কারিগরদের দক্ষতা ও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়।
ফুটিয়া কাঁথা তৈরির ধাপসমূহ:
- সুতো নির্বাচন ও রঙ করা: সাধারণত সুতির সুতো ব্যবহার করা হয়। সুতোকে বিভিন্ন রঙে রঙ করা হয়।
- নকশা তৈরি: কারিগর নিজের মতো করে নকশা তৈরি করতে পারেন অথবা প্রচলিত নকশা অনুসরণ করতে পারেন।
- কাঁথা তৈরি: নকশা অনুযায়ী কাঁথা তৈরি করা হয়। এতে সূঁচ, সুতো এবং কাঁচি প্রধান সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- সাজানো: কাঁথা তৈরি হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করে সাজানো হয়।
সুতার কাজ ব্যবহারের বিভিন্ন উপায়
নকশি কাঁথা শুধু গরম রাখার জন্যই ব্যবহৃত হয় না। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহৃত হয়:
- শীতের সময় গরম রাখার জন্য: শীতের দিনে নকশি কাঁথা ফুটিয়া কাঁথা শরীর গরম রাখতে ব্যবহৃত হয়।
- সাজসজ্জার উপাদান হিসেবে: নকশি কাঁথা ঘর সাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা, বিছানায় ব্যবহার করা, ইত্যাদি।
- উপহার হিসেবে: ফুটিয়া কাঁথা বিশেষ অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
- পর্যটকদের আকর্ষণ: ফুটিয়া কাঁথা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন পণ্য হিসেবে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
নকশি কাঁথা এবং টেকসই উন্নয়ন
সুতার কাজ তৈরি একটি টেকসই উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। এটি গ্রামীণ নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে। এছাড়াও, সুতার কাজ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে কাজ করে।
৩. বাজারে প্রবেশ করুন:
স্থানীয় হাটবাজারে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে শুরু করুন।
বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলা ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করুন।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, দারাজ, অথবা আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইটে পণ্য বিক্রি শুরু করুন।
৪. কর্মী নিয়োগ করুন (প্রয়োজনে):
যদি চাহিদা বাড়ে, তাহলে গ্রামীণ নারীদের সহযোগিতা নিন। এটি কেবল আপনাকে আয়ের সুযোগ দেবে না, বরং তাদের জন্যও আয়ের পথ তৈরি করবে।
নকশি কাঁথার বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্র্য
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কাঁথার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। এই বৈচিত্র্য প্রতিটি অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ভৌগোলিক পরিবেশের প্রতিফলন।
ময়মনসিংহের সুতার কাজ : ময়মনসিংহের কাঁথা তার জটিল নকশা এবং উজ্জ্বল রঙের জন্য বিখ্যাত। এখানকার কাঁথায় প্রায়ই ফুল, লতা, পাখি এবং জ্যামিতিক আকৃতির ব্যবহার করা হয়।
রাজশাহীর সুতার কাজ: রাজশাহীর কাঁথা সাধারণত সাদা পটভূমিতে নীল রঙের নকশা দিয়ে তৈরি হয়। এখানকার কাঁথায় গাছ, ফুল এবং পাখির নকশা বেশি দেখা যায়।
যশোরের সুতার কাজ: যশোরের কাঁথায় লাল রঙের ব্যবহার বেশি হয়। এখানকার কাঁথায় জ্যামিতিক আকৃতির নকশা বেশি দেখা যায়।
সোনারগাঁওয়ের সুতার কাজ: সোনারগাঁওয়ের কাঁথা তার সূক্ষ্ম কাজের জন্য বিখ্যাত। এখানকার কাঁথায় ফুল, লতা এবং পাখির নকশা বেশি দেখা যায়।
কাঁথার সুরক্ষা ও সংরক্ষণ
কাঁথাকে দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য নিচের কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
শুষ্ক ও পরিষ্কার জায়গায় রাখা: কাঁথাকে সরাসরি রোদ বা আর্দ্রতার সংস্পর্শে আসতে দেওয়া উচিত নয়।
পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা:নকশি কাঁথাকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং ন্যাপথলিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ধুলোবালি থেকে রক্ষা করা: কাঁথাকে ধুলোবালি থেকে রক্ষা করার জন্য কাপড়ের থলেতে রাখা যেতে পারে।
সাবধানে ধোয়া: কাঁথা ধোয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। গরম পানি ও তীব্র ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।
নকশি কাঁথার ভবিষ্যৎ
আধুনিক যুগে কাঁথার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। বিশ্বব্যাপী হস্তশিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে সুতার কাজ চাহিদাও বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে সুতার কাজকে আরো জনপ্রিয় করার জন্য নিচের কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুটিয়া কাঁথা শিক্ষা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাঁথা শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।
হস্তশিল্প মেলায় অংশগ্রহণ: বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় কাঁথা প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কাঁথা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
নতুন নকশা ও ডিজাইন: নতুন নকশা ও ডিজাইন তৈরি করে কাঁথাকে আরো আধুনিক করা।
স্থানীয় হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ফুটিয়া কাঁথা শিক্ষার সুযোগ
বাংলাদেশে কাঁথা শিক্ষার জন্য বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। আপনি নিচের জায়গাগুলোতে যোগাযোগ করে কাঁথা শিখতে পারেন:
: আপনার এলাকার স্থানীয় হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সুতার কাজ শিখতে পারেন।
নারী উন্নয়ন সংস্থা: বিভিন্ন নারী উন্নয়ন সংস্থা কাঁথা শিক্ষার ব্যবস্থা করে।
স্বশিক্ষা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে এবং বই পড়ে আপনি নিজে নিজে কাঁথা শিখতে পারেন|
মাসিক ৩০,০০০ টাকা আয় কীভাবে সম্ভব?
১. উৎপাদন বাড়ান:
একটি ফুটিয়া কাঁথা তৈরিতে সময় লাগে ৫-১৫ দিন, তবে গ্রুপ তৈরি করে একসঙ্গে কাজ করলে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
২. উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরি করুন:
সৌখিন ও জটিল নকশার কাঁথা তৈরির মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
বালিশের কাভার, ওয়াল হ্যাংগিং, এবং টেবিল ক্লথের মতো হোম ডেকোর পণ্য তৈরি করুন, যা সাধারণ কাঁথার তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হয়।
৩. অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন:
ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে পেজ খুলে পণ্যের প্রচারণা চালান।
জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটে (যেমন অ্যামাজন, ইবে) পণ্য তালিকাভুক্ত করুন।
৪. পাইকারি ক্রেতা খুঁজুন:
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পাইকারি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পণ্য বিক্রি করে ভালো আয় করা সম্ভব।
৫. ব্র্যান্ড তৈরি করুন:
আপনার পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে একটি নাম বা ব্র্যান্ড তৈরি করুন। এতে ক্রেতারা আপনাকে বিশ্বাস করবে এবং আপনার পণ্যের চাহিদা বাড়বে।
নকশি কাঁথার চাহিদা ও বাজার বিশ্লেষণ
স্থানীয় বাজার:
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে যেমন ঢাকার নিউ মার্কেট, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, এবং সিলেটের আম্বরখানায় কাঁথার ভালো চাহিদা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ফুটিয়া কাঁথা তুলে ধরার কৌশল
ফুটিয়া কাঁথা বাংলাদেশের একটি অনন্য হস্তশিল্প। এর সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং:
সোশ্যাল মিডিয়া: ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, পিন্টারেস্টের মতো প্ল্যাটফর্মে কাঁথার উচ্চমানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা।
ব্লগ ও ওয়েবসাইট: কাঁথা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, ইতিহাস, তৈরির পদ্ধতি, ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে একটি আকর্ষণীয় ব্লগ তৈরি করা।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং: বিভিন্ন দেশের ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে কাঁথা পাঠিয়ে তাদের মতামত জানতে এবং তাদের মাধ্যমে পণ্যটি প্রচার করা।
ই-কমার্স: ইবে, এথিসি, এটসি ইত্যাদি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাঁথা বিক্রি করা।
ফ্যাশন শো ও ইভেন্ট:
- ফ্যাশন শো: বিভিন্ন দেশে ফ্যাশন শো আয়োজন করে কাঁথাকে ফ্যাশনের একটি অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা।
- হস্তশিল্প মেলা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হস্তশিল্প মেলায় অংশগ্রহণ করা।
- কলা ও সংস্কৃতির অনুষ্ঠান: বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত কলা ও সংস্কৃতির অনুষ্ঠানে কাঁথা প্রদর্শন করা।
পার্টনারশিপ:
- স্থানীয় শিল্পী ও ডিজাইনারদের সাথে কাজ করা: কাঁথাকে আধুনিক ডিজাইনের সাথে মিশিয়ে নতুন পণ্য তৈরি করা।
- হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সাথে পার্টনারশিপ: হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে কাঁথা দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রি করার ব্যবস্থা করা।
- বিদেশি ব্র্যান্ডের সাথে কলাবোরেশন: বিদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সাথে কলাবোরেশন করে নতুন পণ্য তৈরি করা।
গুণগত মান বজায় রাখা:
- কারিগরদের প্রশিক্ষণ: কাঁথা তৈরির কাজে নিযুক্ত কারিগরদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া।
- কাঁচামালের গুণগত মান: উচ্চমানের কাঁচামাল ব্যবহার করা।
- মান নিয়ন্ত্রণ: তৈরি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
সরকারি সহযোগিতা:
- রপ্তানি সুবিধা: রপ্তানি কার্যক্রমকে সহজতর করার জন্য সরকারি সহযোগিতা গ্রহণ করা।
- মার্কেটিং ক্যাম্পেইন: কাঁথাকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচার করার জন্য সরকারি পর্যায়ে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালু করা।
৬. স্থায়িত্বশীল উৎপাদন:
- পরিবেশবান্ধব উপকরণ: পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করে কাঁথা তৈরি করা।
- সামাজিক দায়িত্ব: স্থানীয় কারিগরদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা।
নকশি কাঁথাকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরার জন্য এই কৌশলগুলো অবলম্বন করে বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করা সম্ভব।
ইউরোপ, আমেরিকা, এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে নকশি কাঁথার ব্যাপক কদর। বিদেশি ক্রেতারা হস্তশিল্প পণ্যকে মূল্যবান মনে করেন এবং বেশি দামে কিনতে আগ্রহী।
অনলাইন বাজার:
বর্তমানে অনেক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজ কাঁথা বিক্রির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে গ্রাহক খুঁজে পাওয়া এবং পণ্য বিক্রি করা সহজ।
বিনিয়োগ ও আয়ের হিসাব
প্রাথমিক বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে কম হলেও আয় বেশ ভালো হতে পারে।
উপকরণ খরচ: মাসিক ৫,০০০-১০,০০০ টাকা।
পণ্য বিক্রয় মূল্য: একটি কাঁথা গড়ে ১,৫০০-৩,০০০ টাকায় বিক্রি করা যায়।
মাসিক আয়: ২০-৩০টি পণ্য বিক্রি করলে ৩০,০০০ টাকার বেশি আয় সম্ভব।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
চ্যালেঞ্জ:
কাঁচামালের সংকট।
বাজারজাতকরণে সীমাবদ্ধতা।
প্রতিযোগিতা এবং নকল পণ্যের প্রচলন।
সমাধান:
কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য সরাসরি সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পণ্যের প্রচারণা চালান।
মানসম্পন্ন এবং ভিন্নধর্মী পণ্য তৈরি করুন।
সুতাকাঁথার সুরক্ষা ও সংরক্ষণ
নকশি কাঁথাকে দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য নিচের কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
শুষ্ক ও পরিষ্কার জায়গায় রাখা: নকশি কাঁথাকে সরাসরি রোদ বা আর্দ্রতার সংস্পর্শে আসতে দেওয়া উচিত নয়।
পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা: নকশি কাঁথাকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং ন্যাপথলিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ধুলোবালি থেকে রক্ষা করা: নকশি কাঁথা ধুলোবালি থেকে রক্ষা করার জন্য কাপড়ের থলেতে রাখা যেতে পারে।
সাবধানে ধোয়া: ফুটিয়া কাঁথা ধোয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। গরম পানি ও তীব্র ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।
ফুটিয়া কাঁথার বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্র্য
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কাঁথার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। এই বৈচিত্র্য প্রতিটি অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ভৌগোলিক পরিবেশের প্রতিফলন।
ময়মনসিংহের ফুটিয়া কাঁথা: ময়মনসিংহের কাঁথা তার জটিল নকশা এবং উজ্জ্বল রঙের জন্য বিখ্যাত। এখানকার কাঁথায় প্রায়ই ফুল, লতা, পাখি এবং জ্যামিতিক আকৃতির ব্যবহার করা হয়।
রাজশাহীর কাঁথা: রাজশাহীর কাঁথা সাধারণত সাদা পটভূমিতে নীল রঙের নকশা দিয়ে তৈরি হয়। এখানকার কাঁথায় গাছ, ফুল এবং পাখির নকশা বেশি দেখা যায়।
যশোরের কাঁথা: যশোরের কাঁথায় লাল রঙের ব্যবহার বেশি হয়। এখানকার কাঁথায় জ্যামিতিক আকৃতির নকশা বেশি দেখা যায়।
সোনারগাঁওয়ের ফুটিয়া কাঁথা: সোনারগাঁওয়ের কাঁথা তার সূক্ষ্ম কাজের জন্য বিখ্যাত। এখানকার কাঁথায় ফুল, লতা এবং পাখির নকশা বেশি দেখা যায়।