ইসলামে ব্যবসাকে বৈধ আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে পরিচালিত ব্যবসা হালাল উপার্জন এনে দেয় এবং এটি এক ধরনের ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। কুরআন ও হাদিসে ব্যবসার নীতি ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলামে হালাল উপার্জনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ব্যবসাকে এক ধরনের ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে ব্যবসার নীতি নিয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর কিছু বিশিষ্ট সাহাবা ব্যবসার ক্ষেত্রে অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁরা সততা, ন্যায়বিচার, এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে ব্যবসায় পরিচালনা করেছেন। তাঁদের ব্যবসায়িক দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য শিক্ষা এবং অনুপ্রেরণার উৎস।
ব্যবসা নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামে ব্যবসা নিয়ে ইসলামিক উক্তি আছে যা ব্যবসায়ীদের প্রেরণা জোগায়। কিছু মোটিভেশনাল উক্তি:
১. “সততার সাথে ব্যবসা করলে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যায়।”
— হাদিস সূত্র: তিরমিজি২. “যে ব্যক্তি হালাল পথে ব্যবসা করে, আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দান করেন।”
— হাদিস সূত্র: বুখারি৩. “সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে থাকবে।”
— হাদিস সূত্র: তিরমিজি৪. “মিথ্যা বলা ও প্রতারণা ব্যবসাকে ধ্বংস করে।”
— হাদিস সূত্র: মুসলিম৫. “যে ব্যক্তি কাজ করে ও পরিশ্রম করে নিজের জন্য এবং তার পরিবারের জন্য রিজিক উপার্জন করে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।”
— হাদিস সূত্র: বায়হাকি৬. “আল্লাহ্ সেই ব্যবসায়ীকে ভালোবাসেন, যে ব্যবসায় সৎ ও ন্যায়পরায়ণ।”
— হাদিস সূত্র: ইবনে মাজাহ৭. “ব্যবসায়ীকে অবশ্যই লেনদেনের ক্ষেত্রে সত্য বলা উচিত।”
— হাদিস সূত্র: সহিহ মুসলিম৮. “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করেন।”
— হাদিস সূত্র: আবু দাউদ৯. “হালাল পথে উপার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ।”
— হাদিস সূত্র: সহিহ বোখারি১০. “যে ব্যক্তি অপরের অধিকারকে সম্মান করে, তার রিজিক বাড়ে।”
— হাদিস সূত্র: তিরমিজি১১. “ব্যবসায় ঝুঁকি গ্রহণে সচেতন হওয়া উচিত, কারণ তাতে বরকত আছে।”
— হাদিস সূত্র: বুখারি১২. “আল্লাহ সেই মানুষকে পছন্দ করেন, যে ব্যবসায় সততার সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে।”
— হাদিস সূত্র: তিরমিজি১৩. “মুমিন ব্যক্তির কাছে ব্যবসা হলো ইবাদতের একটি অংশ।”
— হাদিস সূত্র: ইবনে মাজাহ১৪. “হালাল ব্যবসায় উপার্জিত অর্থে কোনো শঙ্কা নেই, তাতে বরকত আছে।”
— হাদিস সূত্র: আবু দাউদ১৫. “যে ব্যক্তি কষ্ট করে নিজের পরিবারের রিজিক জোগাড় করে, সে আল্লাহর কাছে প্রিয়।”
— হাদিস সূত্র: মুসলিম১৬. “ব্যবসায় মিথ্যা বলা হারাম।”
— হাদিস সূত্র: সহিহ বুখারি১৭. “আল্লাহ প্রতিটি সৎ ব্যবসায়ীর উপর সন্তুষ্ট।”
— হাদিস সূত্র: ইবনে মাজাহ১৮. “ব্যবসায়ীর উচিত, দামে ন্যায় বজায় রাখা এবং প্রতারণা থেকে বিরত থাকা।”
— হাদিস সূত্র: সহিহ বোখারি১৯. “হালাল পথে রিজিক উপার্জনের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে অনেক পুরস্কার রয়েছে।”
— হাদিস সূত্র: তিরমিজি২০. “ব্যবসায় সততা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখলে ব্যবসায় বরকত হয়।”
— হাদিস সূত্র: মুসলিম২১. “বেশি মুনাফার জন্য মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকো।”
২২. “সততার সাথে ব্যবসা করলে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যায়।”
২৩. “যে ব্যক্তি হালাল পথে ব্যবসা করে, সে আল্লাহর প্রিয়।”
ব্যবসার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সততার সাথে ব্যবসা করে এবং সত্য কথা বলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের একজন অধিকারী বানাবেন।”
১. “হালাল রিজিক উপার্জনের জন্য ব্যবসা উত্তম উপায়।”
— হাদিস সূত্র: বুখারি২. “সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে থাকবে।”
— হাদিস সূত্র: তিরমিজি৩. “যে ব্যক্তি হালাল উপার্জনের জন্য ব্যবসা করে, আল্লাহ তাকে বরকত দান করেন।”
— হাদিস সূত্র: মুসলিম৪. “সৎ ব্যবসায়ীর দেহে রোগব্যাধি কম থাকে।”
— হাদিস সূত্র: তাবরানি৫. “যে ব্যক্তি ব্যবসায় সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে কাজ করে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।”
— হাদিস সূত্র: ইবনে মাজাহ৬. “যে ব্যবসায়ী লেনদেনের ক্ষেত্রে সহজ ও উদার হয়, আল্লাহ তাকে মাগফিরাত দান করেন।”
— হাদিস সূত্র: তিরমিজি৭. “ব্যবসায়িক লেনদেনে সত্যবাদী ও সৎ থাকা একজন ব্যবসায়ীর দায়িত্ব।”
— হাদিস সূত্র: মুসলিম৮. “মুমিন ব্যক্তি তার রিজিকের জন্য হালাল পথে পরিশ্রম করে, তার এই পরিশ্রম আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।”
— হাদিস সূত্র: বায়হাকি৯. “যে ব্যক্তি মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশের অধিকারী হবে।”
— হাদিস সূত্র: আবু দাউদ১০. “হালাল উপার্জনকারীদের রিজিকে আল্লাহ বরকত দান করেন এবং তাদের জীবনে শান্তি নেমে আসে।”
— হাদিস সূত্র: মুসলিম
ব্যবসায় সততা নিয়ে ইসলামিক উক্তি
সততা ইসলামের একটি মৌলিক নীতি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে তা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী ও শহীদদের সাথে থাকবে।”
১. “সততা ব্যবসার মূলধন।” — হযরত উমর (রাঃ)
২. “সত্যবাদী ব্যবসায়ী আল্লাহর কাছাকাছি।” — হাদিস সূত্র: তিরমিজি
৩. “সততার সাথে ব্যবসা করলে রিজিকে বরকত হয়।” — হাদিস সূত্র: মুসলিম
৪. “যে ব্যবসায়ী সত্যবাদী, সে কিয়ামতের দিন নবীদের সান্নিধ্যে থাকবে।” — হাদিস সূত্র: তিরমিজি
৫. “অন্যায়ভাবে সম্পদ লাভে আল্লাহর অসন্তুষ্টি হয়, সততার পথে উপার্জনে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।” — হযরত আলী (রাঃ)
৬. “সৎ ব্যবসায়ী আল্লাহর কাছে প্রিয়।” — হাদিস সূত্র: বুখারি
৭. “সততার ভিত্তিতে ব্যবসায়ের আয় দ্বিগুণ হয়।” — হযরত উসমান (রাঃ)
৮. “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে ব্যবসায় সফল হতে চায়, সে সফলতা পায় না।” — হাদিস সূত্র: আবু দাউদ
৯. “সততার দ্বারা ব্যবসা মানুষের মাঝে সম্মান বৃদ্ধি করে।” — হযরত আবু বকর (রাঃ)
১০. “যে ব্যবসায়ী সততার পথে থাকে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন এবং তাকে বরকত দান করেন।” — হাদিস সূত্র: তিরমিজি
১১. “সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী ও শহীদদের সাথে থাকবে।”
ব্যবসা নিয়ে ইসলামিক উক্তিঃ কুরআনের আয়াত
১. “তোমরা মিথ্যা দিয়ে একে অপরের সম্পদ গ্রহণ করো না এবং বিচারকদের সাথে বিশ্বাসভঙ্গ করো না যাতে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করতে পারো।”
— [সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৮]২. “আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন।”
— [সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৭৫]৩. “যে সকল লোক তাওহিদ এবং সৎ কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর নিকট পুরস্কার এবং তাদের কোনো শঙ্কা নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।”
— [সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৬২]৪. “যে কেউ সৎ কর্ম করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যবসা করে, তাদের প্রতিদান আছে আল্লাহর নিকট।”
— [সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৭০]৫. “তোমরা ব্যবসা করার সময় ন্যায় ও সুবিচারের ভিত্তিতে পরিমাপ করো এবং অন্যদের সম্পদ নিয়ে প্রতারণা করো না।”
— [সূরা আল-মুতাফিফিন, আয়াত ১-৩]৬. “ওহে বিশ্বাসীগণ, তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; তবে যদি তা ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যমে হয়, যা তোমাদের সন্তুষ্ট করে।”
— [সূরা আন-নিসা, আয়াত ২৯]৭. “তোমরা ন্যায্যতা ও সুবিচার বজায় রেখে ব্যবসা করো এবং মানুষদের মধ্যে লেনদেনের সময় ন্যায়বিচার করো।”
— [সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৩৫]৮. “তারা ব্যবসায়িক লেনদেন ও ক্রয়-বিক্রয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে।”
— [সূরা আন-নূর, আয়াত ৩৭]৯. “আল্লাহ প্রত্যেক বান্দার জন্য তার উপার্জনের পথ বৈধ করেছেন। যারা সৎ পথে উপার্জন করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট।”
— [সূরা আন-নাহল, আয়াত ১১৪]১০. “যারা বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে এবং ব্যবসায় সৎ থাকে, আল্লাহ তাদের রিজিক বৃদ্ধি করেন।”
— [সূরা সাবা, আয়াত ৩৯]
এই আয়াতগুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা, ন্যায়বিচার এবং হালাল উপার্জনের গুরুত্বকে তুলে ধরে। আল্লাহ ব্যবসায়ীদের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যা তাদের জীবনে বরকত বয়ে আনে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “ওহে মুমিনগণ, ব্যবসার মাধ্যমে হালাল রিজিক উপার্জন করো।” আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল ও বৈধ করেছেন, তবে শর্ত হলো তা ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।
FAQ
প্রশ্ন: ব্যাবসা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
উত্তর: ইসলাম ব্যবসাকে হালাল উপার্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে, যেখানে সততা ও ন্যায়পরায়ণতা অপরিহার্য।
প্রশ্ন: ইসলাম অনুযায়ী ব্যবসা কিভাবে করতে হয়?
উত্তর: ইসলাম অনুযায়ী ব্যবসা সততা ও ন্যায়ের ওপর ভিত্তি করে করতে হয় এবং কোন প্রকার মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকতে হয়।
প্রশ্ন: ব্যবসার আরবি প্রতিশব্দ কি?
উত্তর: ব্যবসার আরবি প্রতিশব্দ হলো “তিজারাহ।”
প্রশ্ন: অনুপ্রেরণামূলক ইসলামিক উক্তি কি?
উত্তর: ব্যবসা নিয়ে ইসলামিক উক্তি “সততার সাথে ব্যবসা করলে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যায়।”
ইসলামে ব্যবসাকে বৈধ, সম্মানজনক, এবং ফজিলতপূর্ণ একটি পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাদের জীবন থেকে আমরা সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে ব্যবসায়িক সফলতার অসাধারণ উদাহরণ পাই। ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসায় শুধু লাভ অর্জন নয়, বরং মানুষের সেবা, ন্যায়বিচার এবং সততার মাধ্যমেও সফল হওয়া সম্ভব। এই আদর্শ অনুসরণ করলে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টিও লাভ করা যায়। তাই আমাদের উচিত ব্যবসার মাধ্যমে হালাল আয় অর্জন করা এবং ব্যবসায়িক নীতিমালা অনুযায়ী সততা ও ন্যায়পরায়ণতার পথ অনুসরণ করা।
আপনার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, মতামত, বা নতুন কোনো ইসলামিক উক্তি থাকলে মন্তব্যে জানাতে ভুলবেন না!