সোলার প্যানেল,বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে পরিবেশ-বান্ধব শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সৌর শক্তি এমনই একটি পরিবেশ-বান্ধব শক্তি। যা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সোলার প্যানেল এই সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ বিল কমানো যায়, তেমনই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করাও সম্ভব।
সোলার প্যানেল কি?
সৌর প্যানেল হল একগুচ্ছ সৌরকোষ বা সোলার সেল দিয়ে তৈরি একটি ব্যবস্থা। এই সৌরকোষগুলো সূর্যের আলো সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করতে পারে। যখন সূর্যের আলো প্যানেলের উপর পড়ে, তখন এর মধ্যে থাকা সেমিকন্ডাক্টর উপাদানগুলো ফোটন কণা শোষণ করে এবং এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই বিদ্যুৎ ডিসি (DC) প্রকৃতির হয়, যা ইনভার্টারের মাধ্যমে এসি (AC) বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে ব্যবহার করা হয়।
সোলার প্যানেলের প্রকারভেদ
সোলার প্যানেল মূলত তিন প্রকার:
১. মনোক্রিস্টালাইন সৌর শক্তি উৎপাদক: এই প্যানেলগুলো একক স্ফটিক সিলিকন দিয়ে তৈরি। এর কর্মদক্ষতা সবচেয়ে বেশি এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে, এই প্যানেলের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
২. পলিক্রিস্টালাইন সৌর শক্তি উৎপাদক: এই প্যানেলগুলো একাধিক সিলিকন স্ফটিক দিয়ে তৈরি। এর কর্মদক্ষতা মনোক্রিস্টালাইন প্যানেলের চেয়ে কিছুটা কম এবং দামেও সস্তা।
৩. থিন ফিল্ম সৌর শক্তি উৎপাদক: এই প্যানেলগুলো খুব পাতলা এবং নমনীয়। এটি অন্যান্য প্যানেলের চেয়ে হালকা এবং সহজে স্থাপন করা যায়। তবে এর কাজের দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম।
সোলার প্যানেল কিভাবে কাজ করে?
সৌর শক্তি উৎপাদক মূলত ফোটোভোলটাইক প্রভাবের মাধ্যমে কাজ করে। যখন সূর্যের আলো প্যানেলের সৌরকোষে পড়ে, তখন এই কোষগুলো আলোকের ফোটন কণা শোষণ করে। এই ফোটন কণাগুলো সেমিকন্ডাক্টর উপাদানের ইলেকট্রনকে উত্তেজিত করে, যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই উৎপন্ন বিদ্যুৎ ডিসি হওয়ার কারণে, এটিকে ইনভার্টারের মাধ্যমে এসি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা হয়। এই এসি বিদ্যুৎ তখন ঘরোয়া কাজে ব্যবহার করা যায়।
আরো পড়ুন:লাভজনক ১০ টি বিজনেস আইডিয়া। এর মধ্যে থেকে খুঁজে নিন আপনার পছন্দের ব্যবসা
সোলার প্যানেল স্থাপনের সুবিধা
- পরিবেশ-বান্ধব: সৌর শক্তি উৎপাদক ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি পরিবেশ-বান্ধব। এটি কোনো প্রকার কার্বন নিঃসরণ করে না, যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
- বিদ্যুতের বিল সাশ্রয়: সৌর শক্তি উৎপাদক ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুতের বিল কমানো যায়। দিনের বেলায়, যখন সূর্যের আলো থাকে, তখনসৌর শক্তি উৎপাদক থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাড়ির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। ফলে, বিদ্যুৎ কোম্পানির ওপর নির্ভরতা কমে এবং বিদ্যুতের বিলও সাশ্রয় হয়।
- অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয়: আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে বিক্রি করে আয় করা সম্ভব।
- দীর্ঘস্থায়িত্ব: সৌর শক্তি উৎপাদক সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তাই, এটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো বিকল্প।
- রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম: সৌর শক্তি উৎপাদকর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুব কম। বছরে একবার বা দুবার পরিষ্কার করালেই যথেষ্ট।
সোলার প্যানেল থেকে আয় করার উপায়
সৌর শক্তি উৎপাদক থেকে মূলত দুইভাবে আয় করা সম্ভব:
১. বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে: সৌর শক্তি উৎপাদক ব্যবহার করে আপনি আপনার বাড়ির বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। এর ফলে আপনার বিদ্যুৎ বিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, যা আপনার জন্য একটি বড় ধরনের সাশ্রয়।
২. অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে: যদি আপনার সৌর শক্তি উৎপাদক থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আপনার চাহিদার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আপনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারেন। অনেক দেশেই “নেট মিটারিং” ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি আপনার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করতে পারেন এবং এর বিনিময়ে টাকা পেতে পারেন।
সোলার প্যানেল স্থাপনের খরচ
সৌর শক্তি উৎপাদক স্থাপনের খরচ নির্ভর করে কিছু বিষয়ের উপর। যেমন –
- প্যানেলের প্রকারভেদ: মনোক্রিস্টালাইন প্যানেলের দাম পলিক্রিস্টালাইন প্যানেলের চেয়ে বেশি।
- প্যানেলের সংখ্যা ও ক্ষমতা: আপনার বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী প্যানেলের সংখ্যা ও ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়, যা সরাসরি খরচকে প্রভাবিত করে।
- ইনভার্টার ও ব্যাটারির খরচ: সোলার সিস্টেমের জন্য ভালো মানের ইনভার্টার ও ব্যাটারি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
- স্থাপন খরচ: সৌর শক্তি উৎপাদক স্থাপনের জন্য কিছু শ্রমিক ও সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়, যার জন্য খরচ হয়।
সোলার প্যানেল থেকে কত আয় করা সম্ভব?
সৌর শক্তি উৎপাদক থেকে মাসিক আয় নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর। যেমন:
- সিস্টেমের আকার: আপনার সৌর শক্তি উৎপাদক সিস্টেমের আকার যত বড় হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণও তত বেশি হবে।
- বিদ্যুতের ব্যবহার: আপনি কত পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন এবং কত পরিমাণ গ্রিডে বিক্রি করছেন, তার ওপর আপনার আয় নির্ভর করে।
- নেট মিটারিং-এর সুবিধা: যদি আপনার এলাকায় নেট মিটারিং-এর সুবিধা থাকে, তাহলে আপনি আপনার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে ভালো আয় করতে পারবেন।
সাধারণত, একটি ছোট আকারের সৌর শক্তি উৎপাদক সিস্টেম থেকে মাসে প্রায় 3000 থেকে 10000 টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। তবে, বড় আকারের সিস্টেম থেকে মাসে 1 লাখ টাকা বা তার বেশি আয় করাও সম্ভব।
সোলার প্যানেল ব্যবহারের কিছু সমস্যা
- প্রাথমিক খরচ: সৌর শক্তি উৎপাদক স্থাপনের প্রাথমিক খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এটি লাভজনক।
- স্থান: সৌর শক্তি উৎপাদক স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা প্রয়োজন।
- আবহাওয়ার প্রভাব: মেঘলা দিনে বা বৃষ্টির সময় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যেতে পারে।
সৌর প্যানেল কেনার আগে যা জানা দরকার
- আপনার বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণ করুন: সৌর শক্তি উৎপাদক কেনার আগে, আপনার দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা কত তা নির্ধারণ করুন।
- ভালো মানের প্যানেল নির্বাচন করুন: বাজারে বিভিন্ন ধরনের সৌর শক্তি উৎপাদক পাওয়া যায়। ভালো মানের প্যানেল নির্বাচন করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং ভালো ফল দেবে।
- সঠিক ইনভার্টার ও ব্যাটারি কিনুন: সোলার সিস্টেমের জন্য ভালো মানের ইনভার্টার ও ব্যাটারি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
- অভিজ্ঞ সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করুন: সৌর শক্তি উৎপাদক এবং সিস্টেম স্থাপনের জন্য একজন অভিজ্ঞ সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করুন।
- ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিসিং: সৌর শক্তি উৎপাদক কেনার আগে এর ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিসিং সম্পর্কে জেনে নিন।
সৌর প্যানেল ব্যবহারের ভবিষ্যৎ
সৌর শক্তি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল শক্তি উৎস। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সৌর শক্তি উৎপাদকর ব্যবহার ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। সরকারও সৌর শক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে এবং এর জন্য বিভিন্ন ভর্তুকি ও প্রণোদনা প্রদান করছে।
২০২৪ সালের সোলার প্যানেলের অর্থনৈতিক চিত্রটি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে গঠিত। নিচে এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
সৌর প্যানেলের দাম
সৌর প্যানেলের দাম গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালেও এই ধারা অব্যাহত আছে। দাম কমার মূল কারণগুলো হলো:
প্রযুক্তিগত উন্নতি: সৌর প্যানেল তৈরীর প্রযুক্তিতে উন্নয়ন হওয়ায় উৎপাদন খরচ কমেছে।
উৎপাদন বৃদ্ধি: বিশ্বজুড়ে সৌর প্যানেলের উৎপাদন বেড়েছে, যা দাম কমাতে সাহায্য করেছে।
সরকারি নীতি: বিভিন্ন দেশের সরকার সৌর শক্তি ব্যবহারের উপর ভর্তুকি এবং অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়ায় দাম কমেছে।
বর্তমানে, সৌর প্যানেলের দাম সাধারণত প্রতি ওয়াট $0.20 থেকে $0.50 এর মধ্যে থাকে। তবে, এই দাম প্যানেলের ধরণ, গুণমান এবং প্রস্তুতকারকের উপর নির্ভর করে।
সিস্টেমের খরচ
সৌর প্যানেল সিস্টেমের খরচ শুধুমাত্র প্যানেলের দামের উপর নির্ভর করে না। এর সাথে আরও কিছু খরচ জড়িত থাকে, যেমন:
ইনভার্টার: ডিসি (DC) বিদ্যুৎকে এসি (AC) বিদ্যুতে রূপান্তর করার জন্য ইনভার্টার প্রয়োজন।
ব্যাটারি: সৌরবিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়।
স্থাপন খরচ: প্যানেল স্থাপন এবং তার সংযোগের জন্য শ্রমিক খরচ লাগে।
অন্যান্য সরঞ্জাম: কেবল, সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং অন্যান্য ছোটখাটো জিনিসপত্রের খরচও রয়েছে।
একটি সম্পূর্ণ সোলার সিস্টেমের খরচ সাধারণত প্রতি কিলোওয়াট $1,500 থেকে $3,000 পর্যন্ত হতে পারে।
বিনিয়োগের রিটার্ন (ROI):
সৌর প্যানেলে বিনিয়োগের রিটার্ন বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন:
বিদ্যুতের দাম: আপনার এলাকায় বিদ্যুতের দাম যত বেশি, সৌর প্যানেল ব্যবহার করে তত বেশি সাশ্রয় করা যাবে।
সৌর বিকিরণ: আপনার এলাকায় সূর্যের আলো কতক্ষণ থাকে তার উপর নির্ভর করে সৌর প্যানেলের উৎপাদন ক্ষমতা।
সিস্টেমের আকার: আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সিস্টেমের আকার নির্ধারণ করতে হবে।
সরকারি প্রণোদনা: সৌর প্যানেল স্থাপনের উপর সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি এবং কর ছাড় বিনিয়োগের রিটার্ন বাড়াতে সাহায্য করে।
সাধারণত, একটি আবাসিক সৌর প্যানেল সিস্টেমের বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার হতে প্রায় ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে।
সরকারি নীতি এবং প্রণোদনা
সৌর শক্তিকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:
ভর্তুকি: সৌর প্যানেল স্থাপনের জন্য সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
কর ছাড়: সৌর প্যানেল ব্যবহারের উপর কর ছাড় দেওয়া হয়।
নেট মিটারিং: অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করার সুযোগ থাকে, যা থেকে আয় করা যায়।
এই নীতিগুলো সৌর প্যানেল ব্যবহারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
অর্থনৈতিক সুবিধা:
সৌর প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে নিম্নলিখিত অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো পাওয়া যায়:
বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়: সৌর প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিল কমানো যায়।
বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি: সৌর প্যানেল লাগানো থাকলে বাড়ির মূল্য বাড়ে।
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি: অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে বিক্রি করে আয় করা সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ: একবার বিনিয়োগ করলে দীর্ঘকাল ধরে এর সুবিধা পাওয়া যায়।
বাজারের প্রবণতা:
সৌর প্যানেলের বাজার বর্তমানে খুব দ্রুত বাড়ছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
পরিবেশ সচেতনতা: মানুষ পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে।
প্রযুক্তিগত উন্নতি: সৌর প্যানেলের কর্মদক্ষতা বাড়ছে এবং দাম কমছে।
সরকারি সমর্থন: বিভিন্ন দেশের সরকার সৌর শক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে।
২০২৪ সালে সৌর প্যানেলের অর্থনৈতিক চিত্র:
দাম কমছে: সৌর প্যানেলের দাম আরও কমতে পারে।
বাজার বৃদ্ধি: সৌর প্যানেলের বাজার আরও প্রসারিত হবে।
প্রযুক্তিগত উন্নতি: নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তির সৌর প্যানেল বাজারে আসবে।
সরকারি সহায়তা: সরকার সৌর শক্তি ব্যবহারের উপর আরও বেশি প্রণোদনা দিতে পারে।
সোলার প্যানেল ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সৌর শক্তি উৎপাদকর সুবিধা:
পরিবেশবান্ধব:
- সৌর প্যানেল সৌর শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
- এটি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।
- বায়ু দূষণ বা জল দূষণ করে না।
নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস:
- সূর্যের আলো একটি অফুরন্ত এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস।
- জীবাশ্ম জ্বালানির মতো সীমিত নয়।
- এটি দীর্ঘমেয়াদী শক্তি চাহিদা মেটাতে পারে।
আরো পড়ুন:২০২৫ সালের সেরা কিছু ব্যবসার আইডিয়া
বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়:
- সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
- একবার ইন্সটল করা হলে, এটি দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এবং বিদ্যুতের খরচ কমায়।
দূরবর্তী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ:
- যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছানো কঠিন, সেখানে সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সহজ।
- এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।
কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ:
- সোলার প্যানেলের তেমন কোনো রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না।
- মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা এবং সংযোগগুলো পরীক্ষা করাই যথেষ্ট।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি:
- সোলার প্যানেল স্থাপন, তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হয়।
- এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি:
- সৌর প্যানেল স্থাপন করা থাকলে বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পায়।
- এটি ক্রেতাদের কাছে একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।
সরকারি প্রণোদনা:
- অনেক সরকার সৌর প্যানেল স্থাপনের জন্য ভর্তুকি এবং কর ছাড় দিয়ে থাকে।
- এটি সৌর প্যানেল ব্যবহার আরও সহজলভ্য করে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা:
- সৌর প্যানেল ব্যবহার করে যে কেউ নিজের বিদ্যুৎ নিজেই তৈরি করতে পারে।
- এটি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গ্রিডের উপর নির্ভরশীলতা কমায়।
সোলার প্যানেলের অসুবিধা:
প্রাথমিক খরচ:
- সৌর প্যানেল স্থাপন করার প্রাথমিক খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
- এটি অনেকের জন্য একটি বড় বিনিয়োগ হতে পারে।
স্থান প্রয়োজন:
- সৌর প্যানেল установки করার জন্য যথেষ্ট জায়গার প্রয়োজন।
- যাদের ছাদ ছোট বা জায়গা কম, তাদের জন্য এটি একটি সমস্যা হতে পারে।
আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীলতা:
- সৌর প্যানেল সূর্যের আলোর উপর নির্ভরশীল।
- মেঘলা দিনে বা রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হতে পারে।
- এর জন্য ব্যাটারির প্রয়োজন হতে পারে, যা অতিরিক্ত খরচ বাড়ায়।
বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের সমস্যা:
- উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য ব্যাটারির প্রয়োজন।
- ব্যাটারিগুলো ব্যয়বহুল এবং এদের রক্ষণাবেক্ষণও দরকার।
রূপান্তর দক্ষতা:
- সৌর প্যানেলের কর্মদক্ষতা সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পেতে পারে।
- বর্তমানে, বাণিজ্যিক সৌর প্যানেলের রূপান্তর দক্ষতা প্রায় ১৫%-২০%।
স্থানান্তরযোগ্যতা:
- একবার স্থাপন করা হলে, সৌর প্যানেল সহজে স্থানান্তর করা যায় না।
- এটি একটি স্থায়ী সমাধান।
উপকরণ:
- সৌর প্যানেল তৈরিতে কিছু বিরল উপাদানের প্রয়োজন হয়।
- এই উপাদানগুলো পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব:
- সৌর প্যানেল তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছু পরিমাণে দূষণ হতে পারে।
- পুরনো প্যানেল পুনর্ব্যবহার করা কঠিন হতে পারে।
উপসংহার:
সোলার প্যানেল হলো পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এর ব্যবহার একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা করে, তেমনই অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করার সুযোগ তৈরি করে। তাই, আসুন আমরা সবাই সৌর প্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত হই এবং একটি সবুজ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ি।