ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা কী

ব্যবস্থাপনা: Management is getting thing done by others অর্থাৎ অন্যকে দিয়ে করানোর পদ্ধতিই হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। ইহার কাজ অন্যের দ্বারা কার্য সম্পাদন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মানুষের মস্তিস্ক (ব্রন)। মস্তিস্ক যেমন উহার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দেহকে চালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে, ব্যবস্থাপনা ও সে প্রকার কারবারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে উহার উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে। বিশিষ্ট লেখকগণ এর যে সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।

Henri Favol বলে-ব্যবস্থাপনা হচ্ছে পূর্বানুমান করা, পরিকল্পনা করা, আদেশ করা, সংযোজন করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা।

W Taylor এর মতে-ব্যবস্তাপনা হচ্ছে তুমি লোকদের দ্বারা কি করতে চাও উহা ঠিকভাবে জানা এবং তার পর দেখা ও যে, তাঁরা ইহা উৎকৃষ্ট উপায়ে নি¤œতম ব্যয়ে সম্পন্ন করছেন।

Peter dracker- এর অভিমত ব্যবস্থাপনা হচ্ছে বহু উদেশ্য সাধক যন্ত্র যা কারবার পরিচালনা করে ম্যানেজারকে পরিচালনা করে এবং বাকী কাজকেও পরিচালনা করে।

Lundy- এর অভিমত ব্যবস্থানা হচ্ছে প্রধানত পরিকল্পনা, সংযোজন অনুপ্রাণিতকরণ সম্পর্কিত কাজ বা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধানের জন্য অন্যের প্রচেষ্টা নিয়ন্ত্রণ করে।

সংগঠনঃ যার মাধ্যমে কাজ ও কর্মীর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক স্থাপন ও সমন্বয় বিধান হয় তাকে সংগঠন বলে, ইহা ব্যবস্থাপনার একটি অংশবিশেষ।

প্রশাসনঃ ইহা নীতি নির্ধারণ করে। ইহার কাজ বিধান স্থির করা। ইহার কাজ প্রধানত স্থিরিকরণ।

ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া (Process of Management) প্রক্রিয়া হচ্ছে কতকগুলো পদ্ধতির সমষ্টি যা অনুসরণ করলে যে উদ্দেশ্যের জন উহা অনুসরণ করা হবে তা সফল হবে। ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়ার কাজগুলো হলো পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, কর্মী  সংস্থান, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ।

সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা  কীভাবে করবেন?

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা কী

১| পরিকল্পনা (Planning)

ব্যবস্থাপনার প্রথম কাজ পরিকল্পনা। পরিকল্পনা বলতে ভবিষ্যতের কার্যসূচিকেই বুঝানো হয় ভবিষ্যতে কি, কখন এবং কি ভাবে একটি কাজ করতে হবে তা অগ্রিম চিন্তা ভাবনা করার নামই পরিকল্পনা। অপর্যাপ্ত পরিকল্পনা ব্যবসায়ে ব্যর্থতার জন্য একটি অন্যতম কারণ, ব্যবসায় বাণিজ্য সফলভাবে পরিচালনার জন্য চাই একটি যথাযথ পরিকল্পনা।

২| সংগঠিতকরণ (Organizing)

সংগটিতকরণ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার এমন একটি অংশ যার অপরিহার্য পর্যায়গুলো নিম্নলিখিতভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যাবলী অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিটি কর্মকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করতে হয়।

ক. সম্পর্ণ কর্মকান্ডেকে এমনভাবে বিভক্ত করতে হবে যাতে কোন একক ব্যক্তি বা দল যৌক্তিকভাবে এবং

নিরাপদে বাস্তবায়ন করতে পারে। প্রত্যেক কর্মীকে তার যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টন করতে হবে। কোন ব্যক্তির কাজের চাপ খুব বেশী কিংবা খুব কম হওয়া অনুচিত।

খ.  একই ধরনের কাজ সম্পাদনকারীকে একই দলভূক্ত করতে হলে অর্থাৎ সমধর্মী কাজগুলোকে একই দলভূক্ত

করা।

গ. সমন্বয় সাধন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন  ইউনিট অথবা ব্যক্তির কার্যাবলী সমন্বিত করা হয়।

ঘ. ব্যবসা সহজভাবে ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য কিছু ব্যবস্থা যেমন-কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব (শৃংখলাজনিত নির্দেশনা), শ্রমের বন্টন (কাজের বন্টন) এবং ব্যবসায় কে কি ধরবেন (কাজের তালিকা) তা অবশ্যই থাকতে হবে। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সাংগঠনিক কাঠামোর প্রযোজন হবে|

৩| কর্মীসংস্থান (Staffing)

ক্ষুদ্র ও বৃহৎ যে কোন ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য জনশক্তির প্রয়োজন রয়েছে। জনশক্তি ছাড়া সর্বাধুনিক কলকজা সংবলিত প্রতিষ্ঠানও চলতে পারে না। জনশক্তি বা কর্মচারীদের দ্বারাই তৈরী হয় কারবারী প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামো। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের কর্মীসংস্থান সংক্রান্ত কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারবারের কার্যবিভাগ ও পদের সৃষ্টি যোগ্যতানুযায়ী বিভিন্ন পদে কর্মী নিয়োগ প্রত্যেক কর্মীর কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব নির্ধারণ, সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন প্রভৃতি কর্মী সংস্থানের কাজ।

৪| নির্দেশনা/ নেতৃত¡ (Directing/Leading)

ইহা ব্যবস্থাপনার একটি মূল্যবান কার্য্য। পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কারবারের বিভিন্ন স্তরের কারিগর, কর্মচারী ও শ্রমিকগণকে কার্যনির্বাহ করার কার্যকর নির্দেশ প্রদান করাকে পরিচালনা বা নির্দেশনা বলে। পূর্বে নির্ধারিত ও গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনার আবশ্যক হয়। সুষ্ঠ পরিচালনা ব্যতিরেখে কোন প্রতিষ্ঠান গন্তব্য বা লক্ষ্য পথে চলতে পারেনা, ইহার পরিকল্পনা ও সংগঠনে কার্য  কাজে আসে না।

৫| নিয়ন্ত্রণ (Controlling)

মূল লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে কি না এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যাদি পরিচালিত ও সম্পাদিত হচ্ছে কি না তা পরিমাপ করবার প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ বলে। এই ব্যবস্থায় পূর্ব নির্ধারিত মানের সহিত অর্জিত ফলাফলে তুলনা করা হয় এবং প্রয়োজনবোধে সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানকে ও উহার কার্যাবলীকে ঠিকপথে পরিচালিত করা হয়। উল্লেখিত আলোচনা হতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ব্যবস্থাপনায় কার্যবলী পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক এবং এগুলো নিরবচ্ছিন্নতা (Cycle) প্রদান করে ।

একজন আদর্শ ব্যবস্থাপকের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of an Ideal Manager): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ হাবিব উল্লাহ একজন আদর্শ ব্যবস্থাপকের বৈশিষ্ট্যগুলো সংকেতের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছে।

C
:
Careful
(যত্নশীল)
R
:
Rational
(নিরপেক্ষ)
I
:
Innovative
(সৃজনশীল)
C
:
Creative
(সৃষ্টিশীল)
K
:
Knowledge
(জ্ঞান)
E
:
Experience
(অভিজ্ঞতা)
T
:
Tactful
(কৌশলী)

Careful (যত্নশীল): একজন ভাল ব্যবস্থাপককে তার কাজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। ইহা ভাল মন্দ সবদিকেই সতর্কদৃষ্টি রেখে মন্দকে আয়ত্বে রেখে কম পরিশ্রমের অধিক ফললাভ করবার পথ প্রস্তুত করে এবং কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতামূলক অবস্থান সৃষ্টি করে। ফলে কারবারের পক্ষে উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়া সহজসাধ্য হয়।

Rational (নিরপেক্ষ):  ব্যবস্থাপনার জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। একই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাউকে বেশি সুযোগ দেয়া আবার কাউকে কম সুযোগ দেয়া হলো এটা ঠিক নয়।

Innovative (সৃজনশীল): ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গকে সৃজনশীল হতে হয়। ভাল ব্যবস্থাপকগণ উৎপাদনের জন্য নতুন পদ্ধতির সূচনা, নতুন বাজারের সন্ধান, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন কৌশল চিহ্নিতকরণ এবং জনসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে নতুনত্বের সূচনা করেন।

Creative (সৃষ্টিশীল): উদ্ভবনী ফলাফলকে বাস্তবে রুপদানের জন্য ব্যবস্থাপকগণ গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে।

Knowledge (জ্ঞান): ভাল ব্যবস্থাপকের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। তার নিজের যোগ্যতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। একজন ব্যবস্থাপকের আইকিউ তাঁর অধীনস্থদের থেকে গড়মানের উপর থাকা অত্যাবশ্যক।

Experience (অভিজ্ঞতা): ব্যবসায় বাণিজ্যে অতীত অভিজ্ঞতা সফলতার জন্য যথেষ্ট সহায়ক। গবেষণার মাধ্যমে এ সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। তবে অভিজ্ঞতার সাথে শিক্ষাও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দেখা গেছে যে স্বল্প শিক্ষা ও স্বল্প অভিজ্ঞতাস্পন্ন নতুন উদ্যোক্তা/ব্যবস্থাপকদের ব্যর্থতার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

Tactful কৌশলী): ভাল ব্যবস্থাপককে তার কর্মীদের মন বুঝে চলার ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে। ইহার অর্থ হচ্ছে-বিচক্ষনতার সহিত বিচার বিবেচনার দ্বারা কর্মীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

Leave a Comment