উৎপাদন পদ্ধতি কাকে বলে?
উইকিপিডিয়া অনুসারে, উৎপাদন বা শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন (ইংরেজিতে ম্যানুফ্যাকচারিং) বলতে ব্যবহার বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে শ্রম, যন্ত্র ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জৈব ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পণ্য প্রস্তুত করা বোঝায়। হস্তশিল্প থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন এর আওতায় পড়ে। তবে সাধারণত শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন বলতে যান্ত্রিক উপায়ে কারখানাতে কোনও পণ্যের উৎপাদনকেই বোঝানো হয়, যেখানে বিপুল মাত্রায় কাঁচামাল থেকে পণ্য প্রস্তুত করা হয়। উৎপাদিত পণ্য প্রথমে পাইকারী বিক্রেতার নিকট বিক্রি করা হয়, যারা সেগুলো আবার খুচরো বিক্রেতার নিকট বিক্রি করে। খুচরা বিক্রেতারা সেগুলো শেষপর্যন্ত ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করেন। তবে কখনো কখনো উৎপাদিত পণ্যগুলো আরো জটিল পণ্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উৎপাদন পদ্ধতিঃ
বর্তমান শিল্প কারখানায় বিভিন্ন ধরণের উৎপাদন পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে থাকে। পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে আমরা নিম্নলিখিত বিভিন্নভাবে ভাগ করতে পারি।
(ক) সবিরাম উৎপাদন ((Intermittent Production);
(১) জব উৎপাদন (Job Production)
(২) ব্যাচ বা লট উৎপাদন (Batch or lot Production)
(খ ) অরিাম উৎপাদন (continuous)
(১ )ব্যাপক উৎপাদন (Massive production)
(২) প্রক্রিয়াগত উৎপাদন (Procedural production)
(ক) সবিরাম উৎপাদনঃ
সবিরাম উৎপাদন ব্যবস্থায় পণ্যের ডিজাইন ও মান পরিবর্তনের পরিেেপ্রক্ষিতে যন্ত্রপাতি রদবদল ও পূনবিন্যাস করা হয় এবং এই কারণে উৎপাদন প্রক্রিয়া মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। নিম্নে সবিরাম উৎপাদন ব্যবস্থার দু’টি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ঃ
১) জব উৎপাদনঃ
এ ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থায় ভোগ্যপণ্য ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বা দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। ক্রেতা তাঁর ফরমায়েশ পত্রে মালের পূর্ণ বিবরণ প্রদান করে। সরবরাহকারী কোম্পানীর উৎপাদন বিভাগ উক্ত বর্ণনা ও নিদের্শ অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করে। নির্দিষ্ট বর্ণনা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে উৎপাদন বিভাগকে যন্ত্রপাতির কিছু রদবদল, সংযোজন ও পূনবিন্যাস করতে হয় যাতে তারা সহজভাবে ও দক্ষতার সাথে উক্ত দ্রব্য তৈরী করতে পারে। এইজন্য কোম্পানীকে প্রয়োজনবোধে কিছু সময়ের জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। বর্তমান শিল্পায়নের যুগেও জব উৎপানের মাধ্যমে বহু ধরনের দ্রব্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।
(২) ব্যাচ বা লট উৎপাদনঃ
মাঝারী আকারের শিল্প কারখানায় সাধারণতঃ এধরনের উৎপাদন পদ্ধতি অনুসৃত হয়। এই পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক প্রকারের দ্রব্য (নিয়মিত বিরতিকালসহ) অধিক পরিমানে উৎপাদিত হয় বলে তাকে ব্যাচ বা লট উৎপাদন বলে। ব্যাচ উৎপাদন পদ্ধতি ও জব উৎপাদন পদ্ধতির মধ্যে অনেকটা সাদৃশ্য রয়েছে। ব্যাচ উৎপাদন পদ্ধতিতে উৎপাদিত দ্রব্যের পরিমান তুলনামূলকভাবে অত্যাধিক। এই ব্যবস্থায় এক ব্যাচ দ্রব্যের উৎপাদন সমাপ্তির পর অপর ব্যাচ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য যন্ত্রপাতি নিয়োজিত হয়। এই ক্ষেত্র কতগুলি যন্ত্রপাতি নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং অবশিষ্ট অন্যান্য যন্ত্রপাতি সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অধিকাংশ প্রকৌশল সংস্থা ব্যাচ উৎপাদন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। এই উৎপাদন ব্যবস্থায় বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করে মজুত রাখা হয় এবং ফরমায়েশ প্রাপ্তির পর মজুত মাল থেকে বিক্রয় বা সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
(খ) অবিরাম উৎপাদনঃ
এই উৎপাদন পদ্ধতিতে বহুল পরিমানে উৎপাদন করার ব্যবস্থা রয়েছে এবং এতে বিরামহীনভাবে উৎপাদন কার্য চলতে থাকে। এখানে একই রকম যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়। ফলে উৎপাদন পদ্ধতি ও যন্ত্রাতির উলেল্খযোগ্য পরিবর্তন করা হয় না। মোটরগাড়ী নির্মাণ কারখানা এবং বয়ন শিল্পে এধনের উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
(১) ব্যাপক উৎপাদনঃ
এই উৎপাদন পদ্ধতিতে বিশেষভাবে পরিকল্পিত যন্ত্রপাতি বিন্যাস, একটি কার্যের উদ্দেশ্য ব্যবহার করার যন্ত্রপাতি এবং মূল্যবান সাজসরঞ্জামের আবশ্যক হয়। এই ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার ফলে উৎপাদন ক্রিয়ার এক প্রক্রিয়া থেকে পরবর্তী প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে উৎপাদন উপকরণ বা দ্রব্যের অংশ বিশেষ অগ্রসর হয়। এই পদ্ধতি নির্দিষ্ট মানের দ্রব্য উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট মানের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির প্রতিটি এক একটি সুনির্দিষ্ট প্রকৃতির কার্যে নিয়োজিত থাকে। গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রিতে এই পদ্ধতি অনুসৃত হয়। প্রতিটি যন্ত্রপাতি এইরুপে বিন্যাস করা হয়ে থাকে যে তা শুধু এক ধরনের দ্রব্য উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হতে পারে। এই উৎপাদন ক্ষেত্র মালামাল চলাচলের অসুবিধা এড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন,ক্রেন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
(২) প্রক্রিয়াগত উৎপাদনঃ
এই অবিরাম উৎপাদন ব্যবস্থায় সমক্রম উৎপাদন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। প্রক্রিয়গত উৎপাদন পদ্ধতিতে সম্ভাব্য সর্বাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি এবং সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একটি প্রধান কাঁচামালকে বিভিন্ন ধরনের কতিপয় পরিপূর্ণ দ্রব্যে রূপান্তরিত করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ- তেল শোধনাগারে অশোধিত তেলকে কেরোসিন,পেট্রোলিয়াম, গ্যাসেলিন ইত্যাদি পরিপূর্ণ দ্রব্যে রূপান্তর করা হয়।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কি
ভূমিকাঃ
বর্তমানে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন কার্যে নিয়োজিত থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরণের উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশের সংযোজন করা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় একটি টাইপ রাইটার উৎপাদনে কয়েক সহস্র যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়, একখানা উরোজাহাজ নির্মাণে প্রায় আড়াই লক্ষ যন্ত্রাংশ সংযোজন করার প্রয়োজন পড়ে এবং এমনকি একটি তুরপুন আলপিন তৈরী করতে বিভিন্ন ধরণের প্রায় ২০ টি ক্রিয়াকলাপের প্রয়োজন হয়। উৎপাদনের এই সকল প্রয়োজন, যন্ত্রাংশ কিংবা কাঁচামালের প্রস্তুতি, সময়মত সেগুলো ডেলিভারী বা খালাস করা, যথাসময়ে উৎপাদন কার্য আরম্ভ করা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদন কার্য সম্পন্ন করা, পুনরায় নতুন দ্রব্য উৎপাদনে নিয়োজিত হওয়া প্রভূতি কার্য যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। এই উৎপাদন পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রণ কার্য উৎপাদন ব্যবস্থাপকের পরিচালনায় উৎপাদন বিভাগের উপর ন্যস্ত থাকে। “ উৎপাদন এবং ব্যবস্থাপনা” এই দুইটি শব্দের নিশে¬ষণে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যায়।
উৎপাদন প্রক্রিয়া
উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে যোগানকৃত কাঁচামালকে যা উৎপাদনের জন্য অন্যান্য উপকরণসমূহকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ম্যামে ব্যবহার উপযোগী দ্রব্য যা উৎপাদনে রূপান্তরিত হয়। নিম্নে ইনপুট (উপকরণ)-আউটপুট (উৎপাদন) ডায়াগ্রাম দেখানো হলো।
- প্রক্রিয়া
- মজুত
- পরিদর্শন
উপকরণঃ উপকরণ একটি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রাথমিক ও অত্যান্ত মূল্যবান অংশ। উপকরণ হচ্ছে উৎপাদনের বিনিয়োগ যা রূপান্তরকরণের মাধ্যমে উৎপাদন যা পরিনত পণ্য বা সেবা সৃষ্টি করা হয়। উৎপানের প্রকৃতি অনুযায়ী । উপকরণ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। সাধারণত কাঁচামাল, পরিবেশ, শ্রম, যন্ত্রপাতি, পুঁজি, শক্তি, সুযোগ-সুবিধা, তথ্য, প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা কৌশল।
রূপান্তর প্রক্রিয়াঃ রুপান্তর প্রক্রিয়া উৎপাদন ব্যবস্থার অন্যতম অংশ। পরিনত পণ্য তৈরীর উদ্দেশ্যে এ স্থলে কাঁচামালকে যন্ত্রপাতি এবং জনশক্তির প্রয়োগে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়নের ফলে কাম্য মানের নির্দিষ্ট পরিনত পণ্য সময়মত উঃপাদন করা সম্ভব হয়।
উৎপাদনঃ কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে যে পরিনত পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করা হয় তাই উৎপাদন। কাম্যমানের পরিনত পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করাই উৎপাদন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য। উৎপাদন সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রয়োগ করে রূপান্তর প্রক্রিয়া কার্যকরী করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, কোন সাবানের কারখানায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাত করে নির্ধারিত মানের সাবান তৈরী করা হয়। এই সাবানই উক্ত কারখানার উৎপাদন বা আউটপুট।
ফলাবর্তনঃ উৎপাদিত পণ্য কতখানি আশা-ব্যঞ্জক তা ফলাবর্তনের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। ফলাবর্তনের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে সংশোধনমূলক কর্মপন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।