ব্যবসা নির্বাচন করবেন কিভাবে?

ব্যবসা নির্বাচন

ব্যবসা সম্ভাব্যতা যাচাই:

একজন উদ্যোক্তা কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, কোন্ পণ্য বা সেবা উৎপাদন বা বিক্রী করবেন- এই সিন্ধান্তটি হঠাৎ করে বা তাৎক্ষণিকভাবে নেয়ার বিষয় নয়। কোন্ পণ্য উৎপাদন বা বিক্রী করলে ঝুঁকি কমিয়ে আনা যাবে এবং সফলতার সম্ভাবনাকে অনেকাংশে নিশ্চিত করা যাবে- এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। তা করলে আস্থার সাথে অগ্রসর হওয়া যাবে। এই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে প্রকল্প বা উদ্যোগের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়া।

ব্যবসা নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রধান প্রধান দিকগুলো নিম্নক্তভাবে বিন্যস্ত করা যায়-

১.০     বাজার সম্ভাব্যতা

২.০    প্রযুক্তিগত এবং কারিগরী প্রয়োজনসমূহ

৩.০    মূলধন এবং অন্যান্য আর্থিক প্রয়োজনসমূহ

৪.০    বাণিজ্যিক রীতিনীতি ও আইনগত বিষয়াদি

৫.০    পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

১.০     বাজার সম্ভাব্যতা:

  • পণ্য-নির্ভর বাজার সম্ভাব্যতা ঃ বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে যে পণ্য বা সেবা প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে তার নিরীখে।
  • পণ্যের চাহিদা নিরূপণ
  • কাস্টমার বা ক্রেতা
  • নির্ধারিত পণ্যের কাস্টমার কারা? তাদের বয়স, নারী/পূরুষ, গড় আয়, শিক্ষার মান কি? বছরে কয় বার ক্রয় করে? কোন জায়গা থেকে ক্রয় করে? কোন অভিযোগ আছে কি?
  • অঞ্চল বিশেষে এই পণ্যের কেনা-বেচার কোন তারতম্য আছে কি?
  • ভবিষ্যতে এই পণ্যের বাজার সম্ভাবনা কতটুকু?
  • ভবিষ্যতে এই পণ্যের কোন বিকল্প উদ্ভাবনের সম্ভাবনা কতটুকু?
  • পণ্যের সরবরাহ কি নিয়মিত?
  • এই পণ্যের বিশেষ কোন ব্র্যাণ্ড আছে কি?

২.০ প্রযুক্তি ও কারিগরী দিক:

প্রযুক্তিগত ও কারিগরী বিষয়াদি নির্ভর করবে উদ্যোগটি উৎপাদনমুখী নাকি কেনা-বেচা বা বাণিজ্যমুখী তার উপর। উৎপাদনমুখী উদ্যোগের ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয় সমূহ হচ্ছেঃ

  • এলাকা নির্বাচন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এলাকা নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে:
  • জমি, শেড বা ভবন নির্মাণ অথবা ভাড়া নেয়া। এলাকা ভিত্তিতে এসবের মূল্য যাচাই করা।
  • বিদ্যুৎ/পানি ইত্যাদি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা
  • যোগাযোগ ব্যবস্থা
  • বাজারের সাথে যোগাযোগ
  • আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যাংক কাছাকাছি আছে কিনা
  • আশেপাশে শিল্পোৎপাদনমুখী কর্মকান্ড আছে কিনা।

৩.০ মূলধন ও অন্যান্য আর্থিক বিষয়াদি :

  • মূলধন: যেকোন উদ্যোগের সম্ভাব্যতা যাচাই- এর ক্ষেত্রে পুঁজি বা মূলধন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মূলধনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে উদ্যোগের আকার কি হবে এবং বিনিয়োগযোগ্য মূলধন দিয়ে আদৌ বিবেচনাধীন উদ্যেগটি বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা। মূলধন প্রাপ্তির উৎসগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া বাঞ্জনীয়।

দুই ধরনের মূলধন :

ক.      স্থায়ী মূলধন: জমি, দালান কোঠা, যন্ত্রপাতি, অফিস সরঞ্জাম, গাড়ি প্রভৃতি, অর্থাৎ যে-সব জিনিস একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকে।

খ.      চলতি মূলধন: কাঁচামাল, জ্বালানী, শ্রম শক্তি প্রভৃতি, অর্থাৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে গুলো নিয়ত ব্যবহার হয়ে যায়, সে-সব খাতে যে-পুঁজি প্রয়োজন হয়।

  • প্রকল্পের অর্থায়ন: মূলধন প্রপ্তির নিরীখে প্রকল্পের ধরন, আকার ইত্যাদি বিষয়ে সিন্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি সামগ্রীকভাবে প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যাপারেও সিন্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। নিজ উৎস এবং বাইরের উৎস থেকে মূলধন প্রাপ্তির বিষয়টিকে খুব বাস্তব সম্মতভাবে হিসেব করতে হবে যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথে মূলধন প্রবাহে কোর বিঘ্ন না ঘটে।
  • মুনাফা প্রাক্কলন: সমুদয় বিনিয়োগকৃত মূলধন, সমুদয় খরচ এবং অন্যান্য বিবেচনার পর প্রকল্প থেকে পর্যায়ক্রমে কি মুনাফা অর্জিত হতে পারে তার একটি অনুমান থাকা বাঞ্জনীয়। মোট বিক্রয়, এবং প্রশাসনিক ব্যয়, মূলধন বাবদ ব্যয় প্রভৃতি বাদ দিলে প্রাক্কলিত মুনাফার একটি চিত্র পাওয়া যায়।

৪.০ বাণিজ্যিক রীতিনীতি ও আইনগত বিষয়াদি:

  • কোন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সরকারী বিধিমালা মেনে চলার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন লাইসেন্স করা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মাবলী, পরিবেশগত বিধিমালা, ইত্যাদি।
  • কোন কোন পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারী নীতিগত সমর্থন ও সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। আবার, কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারী নীতি বিপক্ষেও যেতে পারে। এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে অগ্রসর হওয়া ভাল।

৫.০      পারিবারিক এবং সামাজিক দিক থেকে বিবেচ্য বিষয়সমূহ :

সকলেরই নানাবিধ পারিবারিক এবং সামাজিক দায় দায়িত্ব ও অঙ্গীকার থাকে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা/ পরিচালনার সাথে এ বিষয়গুলোও সম্পৃক্ত। সম্ভাব্যতা যাচাই এর ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।

Leave a Comment