আপনি যদি একজন নতুন করদাতা হয়ে থাকেন তাহলে জেনে নিন আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণের নিয়ম। আয়কর প্রদান একটি সরকারি বিধান এবং রাজস্ব খাতে আয়ের একটি মূল খাত। একজন সুনাগরিক হিসেবে নিয়মিত আয়কর প্রদান ও আয়কর রিটার্ন জমাদান অত্যাবশ্যক। প্রত্যেক অর্থ বছরের জ্ঞ্যাত আয়, সম্পদ, দায়, লভ্যাংশ বিবিধ খরচ সহ যাবতীয় তথ্যাবলি রাষ্ট্রের নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট আয়কর বিভাগে জমাদান প্রত্যেক করদাতারই দায়িত্ব। তাই এই সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকলে আপনি কর প্রদানে বিভিন্ন জটিলতায় পরতে পারেন।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, আয়কর হল কোন ব্যক্তির বাৎসরিক আয় বা লভ্যাংশের উপর প্রদেয় কর। বিভিন্ন অর্থ বছরে এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে করদানের সীমা নির্ধারণ করা হয়। আর এই আয়কর জমা দেয়ার প্রথম ধাপই হল আয়কর রিটার্ন।
আয়কর রিটার্ন ফর্ম হল, যে ফর্ম বা ছক পূরণ করে আপনি আপনার বাৎসরিক আয় ব্যায়ের প্রতিবেদন পেশ করবেন। তবে এই ফর্ম পূরণের জন্য আপনাকে রাজস্ব বোর্ডের দেয়া প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। যে কোন আয়কর অফিসে আয়কর রিটার্ন ফর্ম বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তাই আপনি এটি সহজেই সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও আয়কর রিটার্ন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন। এছাড়া এর ফটোকপিও গ্রহন যোগ্য। নিচে একটি আয়কর রিটার্ন ফর্মের নমুনা দেয়া হল।
আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণের নির্দেশিকা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণের সুবিধার্থে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। যার সাহায্যে একজন করদাতা আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে কর ব্যবস্থার একটি সহজ ও মৌলিক ধারনা পাবেন। এর ফলে করদাতা নিজেই ফর্ম পূরণ ও তার জন্য নির্ধারিত কর পরিশোধ করতে পারবেন। করদাতা এ নির্দেশিকা অনুসরন করে ফরম পূরণ করলে সে কর ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে একটি পরিস্কার ধারনা পাবে। এ বিষয় গুলো হল, কর নিবন্ধন, আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ, মোট আয় নিরূপণ, করদায় পরিগননাসহ কর প্রদান ইত্যাদি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড( এনবি আর) এর নির্দেশিত-
আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করার নির্দেশিকার পিডিএফ ফাইল
এক পাতার আয়কর রিটার্ন ফরম
আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ এবং দাখিল একটি জটিল পদ্ধতি। তাই একে সহজ আর করদাতাদের কর প্রদানে আগ্রহী করে তুলতে এ বছর এক পাতার ফর্ম পূরণ করেই আয়কর বিবরণী জমা দেয়ার নিয়ম প্রচলন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এটি একটি সহজ পদ্ধতি এবং খুব সাধারন তথ্য দিয়ে পূরণ করা হয়। সেক্ষেত্রে আপনার আয় যদি ৪ লক্ষ টাকার কম হয় এবং সম্পদের পরিমান ৪০ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে আপনি এক পাতার আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ করতে পারেন। কর প্রদানে এই নীতি প্রনয়নে সব ধরনের ছোট করদাতার জন্য বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেয়া সহজ হয়ে গেল।
এই বিষয়ে কিছু শর্তাবলি রয়েছে, যেগুলো পূরণ হলেই করদাতা ফর্মটি কয়েক মিনিটেই পূরণ করে ফেলতে পারবে। তবে উক্ত শর্তাবলী পূরণ হলেও যদি করদাতার আয় বছরের শেষ তারিখে মোটরগাড়ি এর মালিকানা থাকে বা কোন শহর এলাকায় গৃহ সম্পত্তি থাকে বা গৃহ সম্পত্তিতে বিনিয়োগ থাকে তাহলে সেই করদাতা এই রিটার্ন ফর্ম টি ব্যবহার করতে পারবেনা।
ফর্মটিতে চারটি ঘর থাকবে। সেগুলো হল ,
- করযোগ্য আয়,
- মোট পরিসম্পদ,
- করের পরিমান এবং
- আয়ের উৎস।
এ বছর ১ জুলাই থেকে করদাতাদের রিটার্ন দাখিল শুরু হয়েছে এবং ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে এই ফর্ম পূরণ করে জমা দেয়া যাবে। অন্যান্য সময়ে আয়কর মেলায় বহু করদাতা কোণ রকম হয়রানি ছাড়াই এক জায়গা থেকে রিটার্ন দাখিল করতে পারতেন। কিন্তু যেহেতু এবার করোনা ভাইরাসের কারনে আয়কর মেলা হচ্ছেনা তাই আপনি আপনার টিন এ দেয়া ট্যাক্স সার্কেলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করার নিয়ম
আয়কর বিবরনী জমা দেয়ার আগে অবশ্যই সঠিক তথ্য দিয়ে তা পূরণ করতে হবে। পূর্বে এই ফর্ম পূরণ করা বেশ জটিল ছিল। কিন্তু এখন তুলনামূলক সহজ করা হয়েছে। এবার আসুন দেখা যাক কিভাবে ফরম পূরণ করবেন,
আয়কর রিটার্ন ফর্মটি একটি ৪পাতার ফরম। এই ফরমের ৪ টি অংশ।
১ম অংশ- এখানে করদাতা তার ব্যক্তিগত তথ্য দিবে।
২য় অংশ- এখানে আয় এবং করের বিবরন দিতে হবে।
৩য় অংশ- করদাতার সম্পদের বিবরণী ও রিটার্নের সঙ্গে দেয়া দলিলপত্রের বিবরনী দিতে হবে।
৪র্থ অংশ- এই অংশটি কর অঞ্চল থেকে পূরণ করবে, যেটি আয়করের প্রাপ্তি স্বীকার।
তবে এখানে সম্পদ বিবরণীর যে অংশ আছে সেটা যেসব করদাতার সম্পদের পরিমান সোয়া ২ কোটি টাকার বেশি তারা পূরণ করবে। বাকিদের করতে হবে না।
করদাতাকে ফরমের শুরুতে অবশ্যই কর বর্ষ উল্লেখ করতে হবে। যেমন, ২০১৭-২০১৮, ২০১৯-২০২০।
এখানে রিটার্ন সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতিতে দিলে ২ নং এ ‘হ্যাঁ’ এর ঘরে টিক চিহ্ন দিবেন আর সাধারন পদ্ধতিতে হলে ‘না’ এর ঘরে টিক দিবেন।
৩ নং এ- করদাতার নাম
৪ নং – পুরুষ/মহিলা
৫ নং – ১২ ডিজিটের টিন নাম্বার
৬ নং – পুরাতন তিন নাম্বার থাকলে দিতে হবে।
৭ নং – কর সার্কেল
৮ নং – কর অঞ্চল
৯ নং – এখানে, করদাতা যদি দেশে থাকেন তাহলে তিনি নিবাসী আর দেশের বাইরে বসবাস করলে অনিবাসীর ঘরে টিক চিহ্ন দিবেন।
১০ নং – এই অংশটি বিশেষ সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য। এরা হলেন, গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধি, ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতা। এখানে কেউ যদি প্রতিবন্ধি ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবক হয়ে থাকেন তাহলে তাতে টিক চিহ্ন দিবেন।
১১ নং- এ জন্ম তারিখ লিখতে হবে।
১২ নং- এটিতে আয়ের বছর লিখতে হবে।
১৩ নং- করদাতা বেতনভুগি হলে প্রতিষ্ঠানের বা নিয়োগ কর্তার নাম লিখতে হবে।
এরপর যথাক্রমে থাকছে,
- করদাতার স্বামী বা স্ত্রীর নাম
- স্বামী বা স্ত্রীর টিন ( যদি থাকে)
- পিতার নাম
- মাতার নাম
- বর্তমান ঠিকানা
- স্থায়ী ঠিকানা
- যোগাযোগের জন্য টেলিফোন বা মোবাইল নম্বর
- ই-মেইল
- জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর
- ব্যবসার নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি।
এবার আসি দ্বিতীয় অংশে। এখানে প্রথমে টিন নং লিখতে হবে। এরপরে থাকবে বেতনাদির সম্পূর্ণ বিবরন। নিরাপত্তার জামানতের সুদ, সম্পত্তির থেকে আয়, ব্যবসা বা পেশা থেকে আয়, বিনিয়োগ থেকে লাভ, অন্যন্য উৎস থেকে আয়, স্বামী বা স্ত্রীর আয়, ফার্ম বা ব্যক্তি সংঘের আয়ের অংশ, বিদেশ থেকে আয় এবং শেষে মোট আয় ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
এর পরের অংশে কর গননা করে পরিশোধের বিবরনি লিখতে হবে। এছাড়াও থাকবে মোট আয়ের উপর রেয়াত পূর্ব আয়, কর রেয়াতের বিবরন, রেয়াতের পরে নিট কর দায়, নুন্যতম কর, মোট প্রদেয় কর, আগে উৎসে কর দিয়ে থাকলে তার পরিমান, পরিশোধিত অগ্রিম কর, পরিশোধিত ও সমন্বয়কৃত কর, ঘাটতি বা অতিরিক্ত কর থাকলে সেটার বিবরন ইত্যাদি দিতে হবে।
এবার তৃতীয় অংশ,
এখানে থাকবে জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত বিবরন, অগ্রিম আয়কর ও উৎসে কর পরিশোধ। এখানে অন্যন্য দলিলপত্র সংযোজন করতে হবে এবং এর তালিকা দিতে হবে।
সবশেষে, করদাতা কে অঙ্গিকার করতে হবে যে রিটার্নে উল্লেখিত সকল তথ্য সঠিক। ৪ নম্বর অংশটি কর অঞ্চলের অফিস থেকে পূরণ করবে। করদাতাকে যে পরিমান কর দিতে হবে তা সংশ্লিষ্ট বা উল্লেখিত ব্যাংকের শাখা থেকে পে অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফ্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
এক পাতার আয়কর রিটার্ন ফরম download
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়
প্রতিবছরের ৩০ নভেম্বর হচ্ছে কর দিবস অর্থাৎ রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে সময় বৃদ্ধির আবেদন করা যাবে। তবে ৩০ নভেম্বর এর পর থেকে বিলম্ব সুদ আরোপ করা হবে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর প্রদানের মেয়াদ বাড়াতে পারেন। যেহেতু এ বছর কোভিড-১৯ এর কারনে আয়কর মেলা হচ্ছে না তাই পুরো নভেম্বর মাস ব্যাপী করদাতারা দেশের ৩১ কর অঞ্চলের মাধ্যমে রিটার্ন গ্রহন ও কর তথ্য সেবা পাবেন। সেখানে রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষনিক প্রাপ্তি স্বীকার পত্র পেয়ে যাবেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি
আপনারা যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল কিভাবে করবেন সে বিষয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাদেরকে এই অংশে কিছু নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।
আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। না হয় পরবর্তীতে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় পরতে হবে। তাই একজন করদাতাকে শুধু মাত্র আইনজীবীর উপর নির্ভর না করে আয়কর বিষয়ক খুঁটিনাটি জ্ঞ্যান থাকতে হয়। এতে সে নিজেই বিভিন্ন আইনি জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পারে। তাহলে এখন আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণের পর এবার এটি কিভাবে দাখিল করবেন, আসুন জেনে নেই। আয়কর রিটার্ন দাখিলের দুটি পদ্ধতি আছে।
১। সাধারন পদ্ধতি
২। সার্বজনীন স্বনির্ধারণ পদ্ধতি
সাধারন পদ্ধতি
রিটার্নটি সার্বজনীন স্বনির্ধারণী হলে তা উল্লেখ করতে হবে। না হলে রিটার্নটি সাধারন পদ্ধতির আওতায় দাখিল হয়েছে বলে গন্য হবে।
সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি
কোন ব্যাক্তি নির্ধারিত কর বর্ষে সরকার বা আয়কর বিভাগ কর্তৃক নিরূপিত আয় নিজে পরিগননা করে পরিশোধ করার নিমিত্তে দাখিলকৃত রিটার্ন ফর্ম পূরণ প্রক্রিয়াকেই সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি বলে।
রিটার্ন দাখিল করার সময় আরও কিছু শর্ত পালন করতে হবে।
এগুলো হল,
- কোন ধরনের দান দেখানো যাবে না।
- কোন ধরনের ঋণ থাকলে তার স্বপক্ষে স্টে্টমেন্ট দিতে হবে।
- কর মুক্ত আয় প্রদর্শন করলে উহার সমর্থনে দলিল ভিত্তিক প্রমানাদি দাখিল করতে হবে।
- রিটার্ন প্রদান করলে পুনরায় ফেরত যোগ্য কর দিতে হবে না।
রিটার্ন দাখিলের সময় যে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে সেগুলো হল,
- আপনি নতুন করদাতা হলে আপনার পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি, যা প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা বা যে কোন টিআইএনধারী দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে। প্রতি ৫ বছর পর পর করদাতাকে বিবরণীর সাথে তার সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে।
- এন আইডির কপি
- ই টিন এর কপি
- টিডিএস স্টেটমেন্টের কপি
- বেতন বিবরণী
- অতিরিক্ত কর পরিশোধের সমর্থনে চালান /পে- অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের কপি।
- স্যালারি একাউন্টের স্টে্টমেন্ট
- ডিপোজিট থেকে থাকলে তার আয়বছরের স্টে্টমেন্ট
- কোন বিনিয়োগ থেকে থাকলে তার স্বপক্ষে দলিলাদি
- অন্যন্য সম্পত্তি থাকলে সেগুলোর দলিলপত্র
- আগের বছরের দাখিল কৃত আয়কর রিটার্নের এর প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের ফটোকপি।
আয়কর রিটার্ন জমা দিতে কি কি লাগে
আয়কর রিটার্ন জমা দিতে যা যা লাগে সেগুলোর বিস্তারিত বিবরন নিচে দেয়া হল,
বেতন বিবরণী এবং ব্যংক বিবরণী
চাকরিজীবী করদাতা কে তার কর্মস্থল থেকে বেতন বিবরণী সংগ্রহ করতে হবে। পুরো বছরে তার প্রাপ্ত মূল বেতন, প্রাপ্ত যাবতীয় ভাতা, বোনাস সহ মোট কত টাকা পান এবং সেখান থেকে কত টাকা উৎসে কর্তন করা হয়েছে সেটা উল্লেখ করতে হবে।
আপনার বেতন যে ব্যংকে ট্রান্সফার হয় তার জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত এক বছরের ব্যাংক বিবরণী রিটার্নের সাথে জমা দিতে হবে।
বাড়িভাড়ার চুক্তি নামা, ভাড়ার রশিদ এবং ব্যাংক বিবরণী
যে সকল করদাতা বাড়ি ভাড়া থেকে আয় করে, তাদেরকে তার প্রমান স্বরূপ ভাড়াটিয়াকে যে রশিদ দেন তার কপি জমা দিতে হবে।
ব্যংক ঋনের বিবরণী
যদি এমন হয় যে করদাতা বাড়ি করার সময় ঋন নিয়ে ছিলেন তাহলে সেই ঋনের বিবরণী জমা দিতে হবে। ঋনের সাথে যে সুদ দেয়া হয় তা বাড়ি ভাড়া আয় থেকে বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় নির্ধারণ করা হয়।
করদাতার স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর
করদাতা যদি তার স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করে থাকে তাহলে তার দলিলের ফটোকপি রিটার্নের সাথে জমা দিবেন।
ভূমি রাজস্ব, সিটি কর্পোরেশনের কর ও অন্যন্য বিল
যে সকল করদাতা বাড়ির মালিক, তাদেরকে কর হিসেবে ভূমি রাজস্ব দিতে হয়। তাদের কে পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, সিটি কর্পোরেশন কর ইত্যাদি পরিশোধ করতে হয়। তাই এসব প্রদেয় বিলের কপি রিটার্নের সাথে প্রমান হিসেবে জমা দিলে, এই বিলগুলো করদাতার আয় থেকে বাদ দিয়ে প্রদেয় কর হিসেব করা হয়।
অন্যান্য উৎসের আয়
অন্যান্য উৎসের আয়, আয়কর রিটার্নের ১০ টি খাতের একটি। অন্য ৯ টি খাত বাদ দিয়ে আর যে সব আয় আছে, সেই আয় গুলো এ খাতে দেখাতে হয়। যেমন, লভ্যাংশ, ব্যাংক জমার উপর সুদ, সঞ্চয় পত্রের উপর সুদ ইত্যাদি দেখানো হয়। এই খাতগুলোর সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক বিবরণীর কপি রিটার্নের সাথে জমা দিতে হয়।
বিনিয়োগ বিষয়ে প্রমাণপত্র
অনেকের ধারনা আয় যত বেশি, কর তত বেশি। তাই তাদের সম্পদের সঠিক তথ্য দেন না বা অনেক তথ্য লুকিয়ে রাখেন। বাস্তবিক অর্থে এটি একটি ভুল ধারনা। অনেকেই জানেনা সঠিক খাতে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পাওয়া যায়। কর হ্রাস পায়। আপনি যদি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি বিনিয়োগ বা অনুদানের উপর কর রেয়াত পেতে পারেন। যেমন, সঞ্চয়পত্র ক্রয়, শেয়ার ক্রয়, ডিপিএস করা, জীবন বীমা ইত্যাদি করে থাকলে আপনি এই বিনিয়োগের উপর কর রেয়াত পাবেন। তাই এই বিনিয়োগ সমূহের প্রমানাদি আয়কর রিটার্নের সাথে জমা দিতে হবে।
আয়কর পরিশোধের প্রমানপত্র
কিছু কিছু কর আপনি আগেই প্রদান করে থাকেন। যেমন আপনি যদি একজন চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন আপনার বেতন থেকে উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে। আবার যদি ব্যবসায়ি হয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন বিক্রয়ের বিল থেকে উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে। তাই কর রিটার্ন দাখিল করবেন তখন এ সকল প্রদেয় কর বাদ দিয়ে আপনার প্রকৃত কর দায় বের করা হবে। তাই ঐ সকল প্রদেয় করের ব্যাংক ড্রাফ্ট, চালানের কপি এবং পে-অর্ডার ইত্যাদির কপি রিটার্ন দাখিলের সাথে জমা দিতে হবে। এখানে একটি বাংলা আয়কর রিটার্ন ফর্ম দেখানো হল।
রিটার্ন কোথায় দাখিল করবেন
আপনার ইটিন সার্টিফিকেট এ আয়কর অফিসের সার্কেল, জোন ও ঠিকানা লিখা আছে, সে ঠিকানা মোতাবেক রিটার্ন জমা দিবেন। তবে কোন কারনে যদি সার্কেল পরিবর্তন করতে চান তাহলে উপ কর কমিশনার বরাবর স্থানান্তরের জন্যে আবেদন করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাংলাদেশ (সকল আপডেট তথ্যের জন্য)
উপরে আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ এবং দাখিল করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দেয়া হল। যা আপনাকে দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দিয়ে আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ করতে সাহায্য করবে।