নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করবেন কিভাবে?

বর্তমান যুগে ব্যবসা শুধু আয়ের উৎস নয়, এটি স্বপ্ন পূরণেরও একটি মাধ্যম। কিন্তু নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১৫% নতুন ব্যবসা প্রথম বছরে ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো সঠিক পরিকল্পনার অভাব। তাই আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে একটি নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করতে হয় এবং সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হয়।

ধাপ ১: ব্যবসার আইডিয়া নির্ধারণ
প্রথমেই আপনাকে একটি সঠিক ব্যবসায়িক আইডিয়া বেছে নিতে হবে। এটি হতে পারে আপনার প্যাশন, দক্ষতা বা বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা গত কয়েক বছরে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ই-কমার্স মার্কেটের আকার ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আপনার আইডিয়া যদি অনলাইন ভিত্তিক হয়, তাহলে এটি একটি ভালো সুযোগ হতে পারে।

“সফল ব্যবসার প্রথম শর্ত হলো সঠিক আইডিয়া বেছে নেওয়া।” – বিল গেটস

ধাপ ২: মার্কেট রিসার্চ ও টার্গেট অডিয়েন্স চিহ্নিতকরণ
আপনার ব্যবসার আইডিয়া নির্ধারণের পর মার্কেট রিসার্চ করা জরুরি। আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা? তাদের চাহিদা কি? প্রতিযোগীদের অবস্থান কোথায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ফুড ডেলিভারি সার্ভিস শুরু করতে চান, তাহলে আপনার এলাকায় ইতিমধ্যে কতগুলো সার্ভিস রয়েছে এবং তাদের স্ট্রং পয়েন্ট ও উইক পয়েন্ট কি তা জানা প্রয়োজন।

ধাপ ৩: ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন
একটি সফল ব্যবসা পরিকল্পনা আপনার ব্যবসার ভিত্তি। এটি আপনার লক্ষ্য, কৌশল, বিপণন পরিকল্পনা এবং আর্থিক পূর্বাভাস নির্ধারণ করে। একটি ভালো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আপনাকে বিনিয়োগকারী বা ব্যাংক লোন পেতেও সাহায্য করতে পারে।

উদাহরণ:
আপনি যদি একটি ছোট ক্যাফে খুলতে চান, তাহলে আপনার পরিকল্পনায় স্থান নির্বাচন, মেনু, মূল্য নির্ধারণ এবং বিপণন কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

ধাপ ৪: আর্থিক পরিকল্পনা ও বাজেটিং
ব্যবসা শুরু করতে গেলে আর্থিক পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এবং কত সময়ে লাভ হবে তা আগে থেকে হিসাব করুন। বাংলাদেশে এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ৬০% ছোট ব্যবসা আর্থিক পরিকল্পনার অভাবে ব্যর্থ হয়।

ধাপ ৫: আইনি প্রক্রিয়া ও লাইসেন্সিং
ব্যবসা শুরু করতে গেলে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি। ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন। বাংলাদেশে ব্যবসা নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) সাহায্য করতে পারে।

ধাপ ৬: মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং স্ট্র্যাটেজি
আপনার ব্যবসাকে সফল করতে মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক মাধ্যম, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং স্থানীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে অনেক ব্যবসা সফল হয়েছে।

“মার্কেটিং হলো গ্রাহককে এমন কিছু দেওয়া যা তারা চায়, কিন্তু তারা জানেই না যে তারা সেটা চায়।” – সেথ গডিন

ধাপ ৭: টিম বিল্ডিং ও পার্টনারশিপ
একটি সফল ব্যবসার জন্য দক্ষ টিম গঠন করা প্রয়োজন। আপনার টিমের সদস্যদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন করুন। পার্টনারশিপও একটি ভালো বিকল্প হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি নতুন হন।

ধাপ ৮: ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সমাধান
প্রতিটি ব্যবসায় কিছু ঝুঁকি থাকে। আপনার ব্যবসার সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো মোকাবিলার পরিকল্পনা করুন। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অনেক ব্যবসা অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়ে সফল হয়েছে।

নতুন ব্যবসা শুরু করা সহজ নয়, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফলতা অর্জন সম্ভব। আপনার লক্ষ্য স্থির রাখুন, গ্রাহকদের চাহিদা বুঝুন এবং সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট রাখুন। মনে রাখবেন, প্রতিটি সফল ব্যবসায়ীর যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি ছোট ধাপ থেকে।

 নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা নমুনা

প্রতিবেদন জমাদানকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা

জমা দানের তারিখঃ : 

প্রকল্পের সারাংশ

১.         প্রকল্পের নাম ——————————————————-

২.         প্রকল্পের অবস্থান—————————————————-

৩.        মালিকানার ধরণ—————————————————–

৪.         পন্য/ সেবার ধরণ—————————————————-

৫.        কাঁচামালের উৎস—————————————————–

৬.        দক্ষ শ্রমিকের উৎস—————————————————-

৭.         উৎপাদিত পন্য/সেবার বাজার পরিধি————————————-

প্রকল্প ব্যয়

আর্থিক অবস্থা

Ratio Analysis করুন

SWOT বিশ্লেষন

Strengths (সবল দিকসমূহ)

Weaknesses (দুর্বল দিকসমূহ )

Opportunities (সুযোগ সমূহ)

Threats (ভীতি সমূহ)

নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা চারটি দিক

১. বিপনন পরিকল্পনা

১.১ পণ্যের লক্ষ্য বাজার(এখানে আপনার বিক্রয় এলাকা সম্পর্কে বলুন।)

১.২ পণ্যের লক্ষ্য ক্রেতা( শ্রেণী/বয়স/লিঙ্গের ভিত্তিতে আপনার লক্ষ্য ক্রেতাকে বিশ্লেষণ করুন)

১.৩ লক্ষ্য বাজারে  চাহিদা কত

১.৪ আগামী বৎসর সমূহে আপনার লক্ষ্য বাজারে অনুমিত বিক্রয় কত হতে পারে (১.৩ দেখুন)

১.৫ মূল্য নির্ধারণ ( এখানে আপনার পন্যের  মূল্য প্রতিযোগীদের পণ্যের মূল্যের বিবরণ দিন)

১.৬ উপরোক্ত চাহিদার ভিত্তিতে আপনি আগামী বৎসর (বৎসর সমূহে) কি পরিমান উৎপাদন করবেন ?

১.৭ বিপণন কৌশল

বাজারে প্রতিযোগীরা যে সম¯ত কৌশল অবলম্বন করেছে তার আলোকে আপনার পণ্যের

বিপণন কৌশল (পণ্য, মূল্য, বিতরন ও প্রসার কৌশল) আলোচনা করুন

(ক) পণ্য কৌশল

(খ) মূল্য কৌশল

(গ) প্রসার কৌশল (এখানে প্রসারের জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তার বিবরন দিন)

প্রসার খরচ ঃ ………………………………………………..টাকা

পণ্য উৎপাদনের পরে প্রসার কৌশল

প্রসার খরচ ঃ…………………………………………………… টাকা

(ঘ) বিতরন কৌশল

আপনার ক্রেতার কাছে পন্য পৌছানোর জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তার বিবরণ দিন।

বার্ষিক বিতরন খরচ ঃ …………………………………………………. টাকা

২. উৎপাদন পরিকল্পনা

২.১ উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রস্তাবিত উৎপাদন

(এখানে পন্য বা সেবার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রস্তাবিত//পরিকল্পিত উৎপাদন বিষয়ে আলোচনা করবেন)

2.2 মান নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি (মান নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কি গ্রহন করবেন তার বিবরন দিন)

২.৩ পরিবেশ ও বর্জ নিষ্কাশন ব্যবস্থা (বিবরণ দিন)

২.৪ ঘর ভাড়া

২.৫ যন্ত্রপাতির বিবরণ

২.৬  মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ (১ম বৎসরের খরচ)ঃ ………………………………..টাকা

২.৭  পরীক্ষামূলক উৎপাদন খরচঃ……………………………………………………. টাকা

২.৮  তেল, মবিল ও অন্যান্য জ্বালানী খরচ (১ম বৎসরের জন্য)ঃ . ……………………টাকা

২.৯  পরিবহন মূল্যঃ………………………………………………………………….. টাকা

২.১০ কাঁচামাল ও মোড়কের খরচ (১ম বৎসরের জন্য) উৎপাদনের ঘাটতি (ধিংঃধমব) হিসাব করে লিখুন

২.১১ কাঁচামাল পরিবহনের বার্ষিক খরচঃ……………………………….. টাকা

২.১২ পানি সরবরাহ

(ক) সংযোগ খরচ/ কলের মূল্য…………………………………… টাকা

(খ) ১২ মাসের বিল………………………………………………. টাকা

২.১৩ বিদ্যুৎ বিল খরচ

(ক) সংযোগ খরচ………………………………………………. টাকা

(খ) ১২ মাসের বিল………………………………………………. টাকা

২.১৪            (ক) গ্যাস সংযোগ ——————————————টাকা

(খ) গ্যাস বিল     ——————————————টাকা

৩. সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা

৩.১ মানব সম্পদের বিবরণ

এখানে উৎপাদনের সাথে সরাসরি যুক্ত এমন সম¯ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিবরণ দিনঃ

৩.২ প্রশাসনিক খরচ

এখানে উৎপাদনের সাথে সরাসরি যুক্ত নয় এমন সমস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিবরণ দিনঃ

৩.৩ আপ্যায়ন খরচ ঃ ——————————————————– টাকা

৩.৪ আইনগত খরচ (ট্রেড লাইসেন্স) ঃ —————————————-  টাকা

৩.৫ আসবাবপত্র, অফিস, কারখানা ও শো-রুম সাজানোর খরচঃ———————টাকা

৩.৬ অফিস ষ্টেশনারী ঃ  ………………………………………………………………..টাকা

৩.৭  ডাক, টেলিফোন, ফ্যাক্স ঃ ………………………………………………………..টাকা

৩.৮  ভ্রমন খরচ ঃ ………………………………………………………………………টাকা

৪.আর্থিক পরিকল্পনা

৪.১ বিনিয়োগ

4.2 চলতি মূলধন (Working capital)

৪.৩ অর্থায়ন

মোট বিনিয়োগ                    ………………………………………………… টাকা

নিজ অর্থ                           ………………………………………………… টাকা

ঋণ                                 ………………………………………………… টাকা

১২ মাসের  আসল                  ………………………………………………… টাকা

১২ মাসের সুদ                       ………………………………………………… টাকা

১২ মাসের সুদ ও আসল               ……………………………………………….টাকা

৪.৪ ঋন পরিশোধ সিডিউল

সুদের হার (%)                                      {সুদ=ঋনের পরিমান  সুদের হার (%)}

১০০

ঋন পরিশোধ কাল(বছর) ঃ

৪.৫ মোট স্থায়ী সম্পদ ও অবচয়

{অবচয়ের হার (বার্ষিক)ঃ দালান @ ৫%, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ @ ১০%, আসবাব পত্র ও তৈজসপত্র @ ২০%, পরিবহন@২০% অবচয়ের হার বিবেচনা করা যেতে পারে}

4.6 আয় ও ব্যয়ের হিসাব (Income Statement)