বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার ধাপ কয়টি ও কি কি?

বাজারজাতকরণ কাকে বলে

বাজারজাতকরণ হচ্ছে এমন একটি বিনিময় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা আমাদের অভাব বা প্রয়োজনগুলো মেটাতে বা পূরণ করতে পারি। পণ্য, দাম, স্থান এবং প্রচার এই চারটি উপাদান হলো বাজারজাতকরণ কর্মকান্ডের মূলভিত্তি।

আবার, এই চারটি উপাদানের প্রত্যেকটির ভেতরে আরও কিছু উপাদান। এগুলি জানলে বাজারজাতকরণ সম্পর্কিত ধারণাটি সামগ্রীকভাবে বোঝা যাবে।

বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া

  • পণ্যের বিবিধ ধরণ, বৈচিত্র
  • পণ্যের মান
  • ডিজাইন
  • বৈশিষ্ট্য
  • ব্র্যান্ড
  • মোড়ক বা প্যাকেজিং
  • সাইজ/আকার
  • বিবিধ সেবা
  • ওয়ারেন্ট্রি বা গ্যারান্টি
  • পণ্যের নির্ধারিত মূল্য
  • ডিসকাউন্ট
  • ধারে বিক্রির শর্তাবলী
  • পরিশোধের সময় সীমা
  • কোন্ কোন্ এলাকায় পণ্য পাওয়া যাবে।
  • কোন স্থানে/মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
  • সেলস প্রোমশন
  • এডভার্টাইজিং
  • সরাসরি বাজারজাতকরণ
  • গুরুত্বপূর্ণ জন সংযোগ।

আর এই বিনিময় প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হয় উৎপাদকের পণ্য বা সেবা ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর ফলে।

উপরোক্ত বাজারজাতকরণ কাজ সম্পাদনের জন্য চারটি জরুরী উপাদান প্রয়োজনঃ

পণ্য/সেবা : ক্রেতার প্রয়োজন বা চাহিদা নিরূপণ করে তা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবা  থাকতে হবে।

দাম : কাষ্টমার বা ক্রেতার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমনভাবে পণ্যের দাম  নির্ধারণ করতে হবে।

স্থান : ক্রেতা কিভাবে, কোন্ স্থান (চষধপব) থেকে পণ্য/সেবা ক্রয় করতে পারে তা’ নির্ধারণ করতে হবে।

প্রচার : কাষ্টমার বা ক্রেতা যাতে পণ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে সে জন্য কার্যকর প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাজারজাতকরণ কার্যাবলী:

  • অধিকাংশ উৎপাদনকারীই তাঁদের পণ্য সরাসরি চুড়ান্ত ব্যবহারকারীর কাছে বিক্রয় করেন না। উৎপাদক এবং চুড়ান্ত ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি অথবা তার বেশি বাজার চ্যানেল থাকে। বাজারজাতকরণে মধ্যস্থতাকারীর মধ্যে অনেক প্রকার কার্যক্রম থাকে। বাজারজাতকরণ চ্যানেল সিদ্ধান্ত, সবচেয়ে জটিল/তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনাগত সিদ্ধান্ত। প্রতিষ্ঠানের পছন্দকৃত চ্যানেল সমূহ অন্যান্য বাজারজাতকরণ সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে।

 

  • প্রতিষ্ঠানসমূহ তখনই মধ্যস্থতাকারী ব্যবহার করে যখন তার সরাসরি বাজারজাতকরণের মতো অর্থনৈতিক অবস্থা থাকে না, এবং যখন সরাসরি বাজারজাতকরণ ফিজিবল হয় না এবং যখন উপরোক্ত পন্থায় বেশি মুনাফা অর্জন করে। মধ্যস্থতাকারীর ব্যবহার তাদের জন্য লক্ষ্য বাজারে বিপুল ভাবে সহজলভ্য ও প্রভাবমুক্ত রাখার সর্র্বোচ্চ দক্ষতা কমিয়ে ফেলে। মধ্যস্থতাকারীর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে তথ্য সরবরাহ, প্রচারণা, নেগোসিয়েশন, চাহিদা প্রদান, অর্থ বরাদ্দ, ঝুঁকি গ্রহণ, অবকাঠামো তৈরী এবং খেতাব প্রদান করা।

 

  • উৎপাদনকারীদের পণ্য বাজারে প্রবেশ করার অনেক বিকল্প পথ আছে। তারা পন্যটি সরাসরি অথবা এক, দুই অথবা তিনটি চ্যনেলের মাধ্যমেও ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করতে পারে। ক্রেতার প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ, চ্যানেলের উদ্দেশ্যাবলী প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিকল্প চ্যানেলগুলো চিহ্নিত ও মূল্যায়ন এবং চ্যানেলে জড়িত মধ্যস্থতাকারীদের ধরন ও সংখ্যা কতজন হবে সেগুলো নির্ধারণ করা যায় এবং পরিস্কারভাবে প্রতি চ্যানেল সদস্যকে এর কাজের পরিধি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে বলে দিতে হবে।

 

  • মধ্যস্থতাকারী কর্মী নির্বাচন করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ এবং মোটিভেট করাই হলো কার্যকর চ্যানেল ব্যবস্থাপনা। দীর্ঘমেয়াদী অংশিদারিত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে চ্যানেল হওয়া উচিত যেটা সকল চ্যানেল মেম্বারদের জন্য লাভজনক হবে। পূর্ব প্রতিষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে ব্যক্তি বিশেষ চ্যানেল মেম্বারদের পৃথকভাবে পর্যায়ক্রমে মূল্যায়ণ করতে হবে। চ্যানেলের আয়োজন সমূহ পরিপূর্ণ করতে হতে পারে বাজারে অবস্থা বুঝে চ্যানেলের বিভাজন পুনঃ গঠিত হতে পারে।

 

  • সময় সময় এবং মাঝে মাঝে বাজারজাতকরণ চ্যানেলের নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে বাজারজাতকরণ পদ্ধতির উলম্ব প্রবৃদ্ধি অনুভূমিক পদ্ধতি এবং বহুমাত্রিক বাজারজাত পদ্ধতি তিনটি প্রবণতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

  • সকল বাজারজাতকরণ চ্যানেলের প্রতিযোগতাপূর্ণ ফলাফলের যোগ্যতা আছে। নিুোক্ত উৎস সমূহ থেকে লক্ষ্য অনুপযুক্ততা, নিয়মনীতির স্বল্পতা, প্রত্যক্ষজনিত পার্থক্য এবং আন্তঃ নির্ভরশীল সম্পর্ক কোম্পানী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য দ্বন্দ্ব মোকাবেলা করতে পারবে। দুই বা অধিক চ্যানেলে লেভেলের মধ্যে লোক বিনিময়, ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল লীডার নিয়োগ করা এবং ব্যবসা যৌথ সদস্য পদ গ্রহণে উৎসাহ প্রদান।

 

  • কোম্পানী পর্যন্ত চ্যানেল সৃষ্টি করতে হবে কিন্তু নির্দিষ্ট এলাকার জন্য, চুক্তি এবং ডিলারদের অধিকার অনুশীলনের জন্য নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

ভোক্তা পণ্যের বিতরণের মাধ্যম

ভোক্তাদের নিকট দৃশ্যমান পণ্য বাজারজাতকরণে ৫টি চ্যানেল বা বিতরণের মাধ্যম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

উৎপাদনকারী  ভোক্তা

এই চ্যানেলটি খুবই সংক্ষিপ্ত এবং সাধারণ বিতরণের মাধ্যম হিসাবে পরিচিত। এক্ষেত্রে পণ্য বিতরণের জন্য কোন মধ্যস্থতাকারী থাকে না। উৎপাদনকারীরা সরাসরি ভোক্তার নিকট নিজে গিয়ে বা ডাক যোগে পণ্য পৌছে দেয়।

উৎপাদনকারী  খুচরা বিক্রেতা  ভোক্তা

এক্ষেত্রে প্রচুর খুচরা বিক্রেতা সরাসরি উৎপাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করে।

উৎপাদনকারী  পাইকারী বিক্রেতা  খুচরা বিক্রেতা  ভোক্তাঃ

এই চ্যানেল বাজারজাতকরণে গতানুগথিক চ্যানেল হিসাবে পরিচিত। উৎপাদনকারী ও খুচরা বিক্রেতারা আর্থিক দিক বিবেচনা করে মাঝখানের (পাইকার) এই বিতরণের মাথ্যমটি ব্যবহার করে থাকে।

উৎপাদনকারী  প্রতিনিধি  খুচরা বিক্রেতা  ভোক্তাঃ

এ ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীরা খুচরা বাজারে, বিশেষ করে বড় পুঁজির খুচরা বিক্রেতাদের, পণ্য পৌছানোর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পাইকারীদের পরিবর্তে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এজেন্ট বা প্রতিনিধিদের ব্যবহার করে থাকেন। যেমন-গ্লাস পরিস্কার দ্রব্যের উৎপাদনকারীরা মুদি দোকানগুলোতে পণ্য পৌছানোর জন্য বিতরণের মাধ্যম হিসাবে বিভিন্ন ধরনের বেকারী সামগ্রী উৎপাদনকারীদের এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করেন। ফলে বাজারজাতকরণের জন্য একটি বৃহৎ সংযোগ রক্ষা করা সম্ভবপর হয়ে থাকে।

উৎপাদনকারী  প্রতিনিধি  পাইকারী বিক্রেতা  খুচরা  ভোক্তাঃ

উৎপাদনকারী বাজারের ছোট খুচরা বিক্রেতাদের নিকট পণ্য পৌছানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে প্রতিনিধি বা এজেন্ট নিয়োগ করে থাকেন। পাইকারী বিক্রেতারা এই এজেন্টদের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করে এবং ক্ষুদ্র খুচরা বিক্রেতাদের নিকট পৌছে দেয়।

আরও পড়ুন…

পণ্যের বাজারজাতকরণ কৌশল

 

Leave a Comment