উদ্যোক্তা হতে চান?
নিজের পকেট শুন্য ? আসলেই কি উদ্যোক্তা হতে অনেক টাকা লাগে ?
কত টাকা হলে সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন?
আসলে টাকা থাকলেই উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। উদ্যোক্তা হতে হলে দরকার মেধা বুদ্ধি জ্ঞান এবং দক্ষতা।
উদ্যোক্তা কি ?
এবার আসা যাক উদ্যোক্তা কি এবং কাকে বলে? শুরুতেই এত প্রশ্ন দেখে আপনি কি বিরক্ত? এই দেখুন আবার একটা প্রশ্ন করলাম।
উদ্যোক্তা শব্দটা যদিও আমাদের সবার পরিচিত কিন্তু আমরা অনেকেই এই শব্দের অর্থ ও গুরুত্ব বুঝি না। অনেকেই মনে করেন ব্যবসায়ী বলতেই উদ্যোক্তা, এটা সম্পুর্ণ ভুল ধারণা।মনে রাখবেন
“সকল উদ্যোক্তাই ব্যবসায়ী কিন্তু সকল ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা নয়।”
তাহলে এবার আসা যাক ব্যবসায়ী কাকে বলে ? যারা বংশ পরিক্রমায় পুর্ব পুরুষের ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং অনেক বেশী মূলধন নিয়ে সচরাচর বা প্রচলিত লাভজনক ব্যবসাগুলো শুরু করেন তাদেরকে মুলত ব্যবসায়ী বলা হয় । মনে রাখবেন
“ব্যবসা করতে বেশী পরিমাণের মূলধন লাগে কিন্তু উদ্যোক্তা হতে দরকার মেধা, শ্রম, বুদ্ধি আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি।”
উদাহরণ- যদি বলি আপনাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে আপনি এটা দিয়ে বড় ব্যবসায়ী হবেন । তখন আপনি বলবেন কম টাকা দিয়ে ব্যবসা করা যাবে কিন্তু বড় ব্যবসায়ী হওয়া যাবে না । এবার যদি আপনাকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় তখন আপনি এলাকায় একটা দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করবেন তাই নয়কি ?
ধরি, আপনি এলাকায় একটা মুদিমালের দোকান দিলেন আপনার প্রতিমাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকলে ২ বছরে হবে ১২ লক্ষ টাকা । এইভাবে বড় ব্যবসায়ী হওয়া যাবে না । অর্থাৎ বড় ব্যবসায়ী হতে হলে আপনাকে অনেক বেশী পরিমাণের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এবং বড় ব্যবসা করতে হবে ।
কিন্তু যদি আপনার মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও বাস্তবধর্মী আইডিয়া থাকে তাহলে আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন অর্থাৎ বড় ব্যবসায়ী হতে পারবেন । কিন্তু কিভাবে ?
ধরলাম আপনার কাছে বেশী মূলধন নাই কিন্তু উদ্যোক্তা বা বড় ব্যবসায়ী হবেন । তাহলে বাস্তবধর্মী আইডিয়া / বুদ্ধি বের করতে হবে এবং সাথে অদম্য ইচ্ছাশক্তি লাগবে কারণ আপনাকে অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হবে এবং প্রথম দিকে ধৈর্য্য ধারণ করে লেগে থাকতে হবে ।
শুরু করা যাক ব্যবসা, প্রথমেই আপনি এলাকার খোলা বাজার থেকে মরিচ, হলুদ, মসলা বা যেখানে এসব বেশি উৎপাদন হয় ও দাম কম সেখান থেকে কিনে আনবেন । এবার মরিচ, হলুদ, মসলা স্থানীয় মেশিনে গুঁড়ো করে ঘরে ২ জন কর্মী রেখে সুন্দর ডিজাইন করা প্যাকেটে প্যাকেটজাত করবেন । তারপর স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে নিজের পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনা করলেই দেখবেন আপনার পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হবে । কারণ আপনি দোকান মালিককে ১০০% আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারবেন আপনার পণ্যে কোন ভেজাল নাই এবং আপনি অন্যান্য কোম্পানীর পণ্যের চাইতেও কম দিয়ে দোকানে বিক্রয় করতে পারবেন । কারণ অন্যান্য কোম্পানীর মত আপনার বিজ্ঞাপন খরচ নাই ।
মনে রাখবেন, কোন কোম্পানির পণ্যের উৎপাদন খরচের চাইতেও কয়েকগুণ বেশী খরচ হয় প্রচারণায় । আপনার পণ্যের গুণাগুণ ও দাম কম থাকবে বিঁধায় ধীরে ধীরে আপনার পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে । এভাবে স্থানীয় বাজারের পর আশে পাশের বাজার , তারপর নিজের উপজেলা এরপর জেলা পর্যায়ে আপনার পণ্য বাজারজাত করতে পারবেন । এভাবেই ২ বছরের মধ্যে আপনি সারা বাংলাদেশে ব্যবসা প্রসার করতে পারবেন ও প্রচুর জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন এবং নিজেকে সফল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে দেখতে পারবেন ।
কি ভাবছেন ? যে আইডিয়া দিলাম সেটা শুরু করে সফল হয়ে যাবেন ? এই আইডিয়া অনেকেই ইতিমধ্যে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন । অর্থাৎ এই আইডিয়া এখন পুরাতন বা গতানুগতিক হয়ে পড়েছে । আজ থেকে ১০ বছর আগেও আমরা মরিচ, হলুদ প্যাকেটজাত হবে তা কল্পনা করি নাই কিন্তু এখন দেখবেন বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর প্যাকেটজাত মরিচ, হলুদ রয়েছে । তাহলে বলা যায় আজ থেকে ১০ বছর আগে যেকোন একজন এই ভিন্নধর্মী আইডিয়া প্রথমে শুরু করেন ।
আপনি হয়ত চিন্তা করছেন, বাজারের খোলা মরিচ, হলুদ প্যাকেটজাত করণ এটা তেমন কি ভিন্নধর্মী আইডিয়া ? যিনি বা যারা প্রথম এই আইডিয়া বা প্যাকেটজাত মরিচ, হলুদ বাজারজাতকরণ করেছিলেন তারাই এখন সফল ব্যবসায়ী । তাদের বিনিয়োগ ছিল কম কিন্তু সফলতা অনেক বেশী।
মনে রাখবেন,প্রতিবন্ধকতা সব সময়ই থাকবে। কিন্তু সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। লেগে থাকার প্রবণতা থাকলে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়া সম্ভব । নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে । ব্যবসার অনেক সুযোগ আছে । সেসব কাজে লাগাতে হবে। ইচ্ছা থাকলে ছোট দিয়ে শুরু করে বড় হওয়া যায় । চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে বড় হওয়া কোন বিষয় নয়।
ছোট বেলা থেকেই যেকোন কাজ ভিন্নভাবে করতে চেষ্টা করতাম । জীবনে সব সময় দুটি জিনিস মেনে চলেছি । বড় হতে হলে স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়, অবশ্য সব স্বপ্নই বাস্তবায়িত হবে এমন নয়। যদি শুধু মাত্র ৬০-৭০% স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়, তাহলেই মানুষের জীবন বদলে যায় । দ্বিতীয় হল ব্যবসা করতে মূলধন লাগে না— লাগে স্বপ্ন ও সাহস ।
আমিই এর বড় প্রমাণ । যখন ব্যবসা শুরু করি তখন সাহস, সততা আর পরিশ্রম করার মানসিকতা ছাড়া আর কোন মূলধন ছিল না আমার । আজ চাঁদমামা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি কেবল স্বপ্ন দেখার অভ্যাসের কারণে। আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের গল্প আর দশজনের মতোই সাধারণ । মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, ফলে ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু করব, বড়লোক নয় সফল ব্যাক্তি হব ।
এখানে সফল ব্যাক্তি বলতে কি বুঝালাম? চিন্তা করুণ আপনি আমি কেনো বড়লোক হব? কারণ বড়লোক হলে ভালভাবে জীবনযাত্রা করা যাবে। মনে করেন আপনি বড়লোক হলেন কিন্তু দেশে বেকার সমস্যার কারণে যুবসমাজ হতাশায় ডুবে নানা রকম অপরাধ যেমন মাদকাসক্ত, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, হাইজ্যাকিং ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে সুন্দর সমাজ টাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে। ফলে আপনি বড়লোক হয়েও শান্তিতে ও ভালভাবে জীবনযাত্রা করতে পারবেন না।
এবার আসা যাক সফল ব্যাক্তি বলতে কি বুঝায় ? যখন আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা পাবেন তখন অনেক নতুন কর্মসংস্থান দিতে পারবেন এবং আপনাকে দেখে যুবসমাজ অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে । ফলে দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং বেকার সমস্যা দূরীকরণের মধ্য দিয়ে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং সকলের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশ ও জাতি উন্নত হবে। নিজের সাথে সাথে দেশের বা সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারাটাকেই সফলতা বুঝানো হয়েছে।
উদ্যোক্তা কাকে বলে ?
ব্যবসায়ী- পুরাতন বা গতানুগতিক ধারার ব্যবসা গুলোতে কম মূলধন বিনিয়োগে ছোট ব্যবসায়ী এবং বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে বড় ব্যবসায়ী হওয়াকে ব্যবসায়ী বলে। উদ্যোক্তা-কম বা বেশী মূলধন যাইহোক মেধা, শ্রম, বুদ্ধি ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির সাথে বাস্তবধর্মী আইডিয়া সংমিশ্রণ করে সময়ের সাথে সাথে সফল ব্যবসায়ী হওয়াকে উদ্যোক্তা বলে।
ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তার মধ্যে পার্থক্যঃ ব্যবসায়ীরা পুরাতন বা গতানুগতিক ধারায় ব্যবসা গুলো পরিচালনা করেন বিঁধায় তাদের অগ্রগতি ধীরে হয় কিন্তু উদ্যোক্তারা নতুন বা প্রচলিত ব্যবসাকে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে ভিন্নভাবে বাস্তবতার সাথে মিল রেখে সহজে ও কমসময়ের মধ্যে বেশী সফলতা পাওয়ার জন্য নতুন পদ্ধতি বা আইডিয়া প্রয়োগ করেন ফলে তারা প্রথমদিকে লাভের মুখ কম দেখলেও তুলনামুলক কম সময়ের মধ্যে অনেক বেশী সফলতা অর্জন করতে পারেন । সবচাইতে বড় কথা হল ব্যবসায়ীদের সফলতা একমুখী ও সীমাবদ্ধ অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের সফলতার সিঁড়ি বহুমুখী ও অসীম। অতএব,ব্যবসায়ী থেকেও উদ্যোক্তা হওয়া শ্রেয়।
এতক্ষণ আলোচনা করলাম ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা এই দুইটা বিষয় নিয়ে, অর্থাৎ প্রথমত সবাই আমার সাথে একমত হবেন, যেহেতু আমাদের দেশে বিনিয়োগ খুবই কম এবং বিনিয়োগ পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য বিষয় তাই ব্যবসা করতে হলে কম বিনিয়োগ দিয়েই এমন ব্যবসা করতে হবে যেসব ব্যবসা দিয়ে নিজের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়।
কিছু ব্যবসা আছে যা দিয়ে আপনি ভালভাবে চলতে পারবেন কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হবে না আর কিছু ব্যবসা আছে প্রথম দিকে আপনার চলতে কষ্ট হলেও সময়ের সাথে সাথে আপনার অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবেন।
প্রথম ধরণের ব্যবসায় আপনার মূলধন বেশী লাগবে এবং লোকসানের সম্ভবনা কম আর ২য় ধরণের ব্যবসায় আপনার মূলধন কম বেশী যায় হোক লোকসানের সম্ভবনা বেশী থাকবে এবং সফলতার সম্ভবনাও বেশী থাকবে। মনে রাখবেন বিশাল কিছু পেতে হলে ছোট কিছু ছাড়তে হয়।
যেকোন কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলবে ১ম ধরণের ব্যবসা করাই ভাল কারণ অনেক বেশী নিরাপদ, কিন্তু উদ্যোক্তা মনোভাবের তরুণদের জিজ্ঞেস করলেই ২য় ধরণের ব্যবসা পছন্দ করবে।
মনে রাখবেন ভাল কিছু পেতে হলে লোকসান বা ক্ষতির পরিমাণ বেশী থাকে এই ক্ষতির বিষয়টি ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মাথাই থাকলে আজ আমরা বাংলায় কথা বলতে পারতাম না এবং স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পারতাম না। যারা ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজী রেখেছিলেন তারা ক্ষতির কথা চিন্তা না করে বেশী সুফল বা সফলতা পাওয়ার জন্যই জীবন দিয়েছিলেন এবং তারা পরিবর্তন চেয়েছিলেন বলেই আমরা স্বাধীন দেশের জনগণ।
যদিও বেশিরভাগ মানুষ পৃথিবীতে চিরাচরিত নিয়মকে সহজ নিয়ম মনে করে থাকে বা পরিবর্তনে ভয় পায়, কিন্তু যুগেযুগে আমরা দেখেছি তরুণ উদ্যোক্তারা পুরাতন নিয়ম ভঙ্গ করে নতুন নিয়মের মাধ্যমেই বার বার পজিটিভ পরিবর্তন বা সুফল নিয়ে এসেছে। পৃথিবী পরিবর্তনশীল তাই পরিবর্তনকে স্বাগত জানানো উচিত,আপনি চিন্তা করছেন ঠিক বলছি নাকি ভুল? যদি পরিবর্তন মেনে না নিতে পারেন তাহলে পরিবর্তনের সুফল তথ্য প্রযুক্তি আপনি কেন ব্যবহার করছেন? আর পরিবর্তন না মানলে আমরা আদিম যুগেই থেকে যেতাম, বর্তমান আধুনিক যুগ আমাদের কাছে কল্পনাতীত থাকত।
এতক্ষণের আলোচনার পর অনেকেই বলবেন ব্যবসা করতে মূলধন লাগে, আপনার কাছে মূলধন নাই তাই আপনি ব্যবসা করতে চাইলেও পারবেন না অন্যদিকে উদ্যোক্তা হতে হলে রিস্ক নিতে হয় আর আপনি রিস্ক নিতে ভয় পান তাই উদ্যোক্তা হওয়াও সম্ভব না।
ঠিক আছে মেনে নিলাম আপনার কথায় যুক্তি আছে। তাহলে আপনার কাছে আমার প্রশ্ন আপনি পড়ালেখা করছেন কেন? উত্তরে বলবেন চাকরি করার জন্য। আরো বলবেন সবাই উদ্যোক্তা হলে উদ্যোক্তাগণ প্রতিষ্ঠানের জন্য চাকরিজীবি কোথায় পাবেন ? ঠিক আছে মেনে নিলাম আপনি চাকরি করবেন।
কিন্তু সবাই যদি চাকরি করেন তাহলে উদ্যোক্তা হবেন কে ? আর উদ্যোক্তাই যদি না থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠান হবে না আবার প্রতিষ্ঠান না থাকলে আপনি চাকরি করবেন কোথায় ? এই পৃথিবীতে সবাই ডাক্তার, সবাই ইঞ্জিনিয়ার, সবাই উদ্যোক্তা বা সবাই চাকরিজীবি হবে না এটা সবাই জানি। কিন্তু আপনি আমি উদ্যোক্তা না হলে বর্তমান বেকার সমস্যা দূর হবে কিভাবে ? বলবেন সেটা সরকারের দায়িত্ব।
সরকারের একার পক্ষে কখনো এত বেশী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব না। আর তাই দিন দিন বেকার সমস্যা বাড়তে থাকবে আর দেশের তরুণ সমাজ ভাল ভাল ডিগ্রী নিয়ে চাকরীর অভাবে পরিবারের কথা শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে কোন একদিন আত্মহত্যা করে নিজের জীবন শেষ করবেন অথবা পথ ভ্রষ্ট হয়ে সন্ত্রাসী,মাদক বা কালোবাজারি হয়ে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন ?
হ্যাঁ আমি আবার বলছি দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনবে বেকার জনগোষ্টি। এরপরও যদি আপনার সুবুদ্ধি না হয় তাহলে বলব ঠিক আছে আপনি ডিজিটাল দাস হয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। আমাদের দেশের কাধে বেকারত্বের হার প্রতি বছরই বাড়ছে। সরকার পারছে না তাদেরকে সুযোগ তৈরী করে দিতে। আর আমাদের নিজেদের মানুষিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে পারছি না আমরা। এর পেছনের কারন খুঁজতে চলুন ফেলে আসা সময়ে একটু ঘুরে আসি……. ।
উদ্যোক্তার গুনাবলি !
বৃটিশ আমাদের অনেক কিছুই শিক্ষা দিয়েছে কিন্তু আমরা আজও তা অনুভব করতে পারিনি। বাঙালীর হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে নিজেদের ব্যবসাকে সে সময় করেছিল সমৃদ্ধ এই বৃটিশ। নীল চাষে বাংলার কৃষকদের বাধ্য করে মসলিন কারিগরদের সমৃদ্ধ ব্যবসার ইতি টানতেও বাধ্য করেছিল তারা। বৃটিশরা নিজেরা ব্যবসায়িক সফলতার শীর্ষে থাকলেও তারা এ বাংলার মানুষের মনে দাসত্বটা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। তারা বাঙালীর মনে খুব ভালভাবে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে যে চাকুরীতেই সম্মান আর নিশ্চয়তা।
আর আজও আমরা সেই শৃঙ্খল ভাঙতে পারিনি । নিজেকে তাই চাকর ভবি, যার শ্রুতিমধুর উচ্চারন চাকুরীর মধ্যে আটকে রেখেছি । সেই বৃত্ত থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে নিজের স্বকীয়তাকে। প্ররিশ্রম আর মেধার সমন্বয় করতে হবে ছাত্র জীবন থেকেই।
আপনি নিশ্চয় জানেন ছাত্র জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ উক্তিটি। সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। তাহলে আপনি কেন ছাত্র অবস্থায় ব্যবসা করতে পারবেন না ? আপনি লেখাপড়া শেষ করবেন তারপর ব্যবসা করবেন ততদিনে আপনি আপনার জীবন থেকে কতটা বছর পিছিয়ে পড়বেন তা কি ভেবেছেন ? যে সময়ে এসে পড়াশুনা শেষ করবেন ততদিনে আপনার ব্যবসায়িক জীবনে প্রতিষ্ঠাও পেয়ে যেতে পারেন।
উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় ?
আপনি প্রথমত সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি শিক্ষা জীবন শেষে শিক্ষিত চাকর হবেন নাকি নিজেই হবেন শিক্ষিত চাকরদের বস ? আপনি পড়াশুনা করেন, কি ধরনের ব্যবসা করবেন পড়াশুনার পাশাপাশি ? পড়াশুনার সাথে ব্যবসা করার টাইম কিভাবে ম্যানেজ করবেন? আপনার পারিবারিক ভাবে কতটা সাপোর্ট পাবেন? পড়াশুনা আর ব্যবসা দুটো একসাথে কি করে করা সম্ভব?
এসব প্রশ্ন জট থেকে বেড়িয়ে আসুন। নিজেকে স্থির করুন আপনার দুটোই করা সম্ভব। প্ররিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগান। লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে কাজে নেমে পড়ুন। আর ব্যবসার আয়কে ভবিষ্যতের বড় বিনিয়োগ করতে সঞ্চয় করুন। ছোট থেকে কিছু করার চেষ্টা করুন। শর্টকাটে বড় হওয়ার চিন্তা মাথায় থাকলে আগে থেকেই বাদ দিয়ে দিন।
উদ্যোক্তা হতে চাই ?
বিলগেটস এর থেকে বড় ধনী হতে আপনাকে খুব বেশী ভাল ছাত্র হতে হবে না। তবে ধৈর্য্যের প্রয়োজন হবে। লেগে পড়ে থেকে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুজতে হবে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করা জানতে হবে। আপনার কাজ নিয়ে যে যা মন্তব্য করুক তাতে আপনার কি যায় আসে? আগে আপনি সন্তুষ্ট হন আপনি যে কাজ করবেন তার ওপর। কত ধরনের ব্যবসা মানুষ করছে? আপনার কাছে যেটা পছন্দ তা থেকেই বেছে নিন না একটা। হতে পারে সেটা মোবাইল রিচার্জ এর ব্যবসা, কিংবা কোচিং সেন্টার, নার্সারী কিংবা বাড়িতে বসেই হাস, মুরগী, কোয়েল পাখি পালন, গরুর মাংশ উৎপাদন অথবা দুগ্ধ খামার। কবুতর পালন করে মুক্তির স্বাদও নিতে পারেন নিজেকে সাবলম্বী করে। বেকারত্ব ঘুচাতে করে ফেলতে পারেন হস্ত কিংবা কুটির শিল্পের ছোট্ট একটা শপ কিংবা শো পিসের দোকান।
যারা একটু তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ভালবাসেন তারা দিতে পারেন কম্পিউটার বা মোবাইল এর দোকান কিংবা সার্ভিসিং সেন্টার। সৃজনশীল যারা আছেন সেই সাথে ফ্যশন সচেতন তারা কেন ফ্যাশন হাউজ বা গার্মেন্টস এর তৈরী পোষাকের ব্যবসা থেকে দূরে থাকবেন। অধিকাংশ মেয়েদের প্রিয় খাবার চটপটি ফুসকার দোকানও করতে পারেন কিংবা ফাষ্ট ফুডের দোকান করতে পারেন। অফিস পাড়ায় দুপুরে বিরিয়ানী বিক্রি করে যে আয় কম নয় তাও কিন্তু না।
গ্রামে আছেন শহুরে ব্যবসার সুযোগ নেই। তাতে কি আপনার নিজের জমি অথবা পাশেরই কারো জমি লীজ নিয়ে করতেপারেন শাক-সবজির চাষ। মজা-পচা পুকুরটা পরিস্কার করে মাছ চাষ করতে পারেন। আপনার পাশেরই বাজারে কিংবা হাটে ফসল বেচাকেনার কোন একটা ব্যবসা করেও হতে পারেন সফল। উন্নত প্রযুক্তির সেবা কৃষকদের সরবরাহ করেও হতে পরেন সফল ব্যবসায়ী।
আরও যে কত কত ধরনের ব্যবসা আছে তা আপনি করে যেতে পারেন নিঃসংকোচে। আপনার দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের। আপনি চাইলেই পারবেন চলমান ব্যবসার নতুন কোন ব্যবসায়িক রুপ দিতে কিংবা নতুন কোন ব্যবসায়ের সৃষ্টি করতে। যেটা আপনার নাম বহন করে এনে দিবে দাসত্বমুক্ত পরিচয়। সফল উদ্যোক্তার পরিচয়। যেখানে দেশে বিশ লক্ষের বেশী বেকার দ্বারে দ্বারে টাক খেয়ে বেড়াচ্ছে হতাশা নিয়ে। চাকর যার শ্রুতিমধুর উচ্চারন চাকুরী।
বৃটিশ আমাদেরকে যখন শাসন করেছে তখনই আমাদের মনে খুব ভালভাবে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে চাকুরী মানেই নিরাপত্তা। চাকুরী মনেই সম্মান। চাকুরী মানেই নিশ্চিত আয়। আর সেই সময়ে আমাদেরকে ব্যবহার করে বৃটিশ তার ব্যবসায়ের রাজত্ব আর প্রভাব বিস্তার করেছে। আমাদের সমৃদ্ধ মসলিন শিল্পকে ধ্বংস করে নীল চাষে বাধ্য করেছে। দাসত্ব কিভাবে অর্জন করতে হয় প্রতিযোগীতা করে তাও খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য :
নিজে কিছু একটা করব, উদ্যোক্তা হব, ব্যবসায়ী হব, সেরা ধনীদের একজন হব, সুপারম্যান হব, সুপার হিরো হব। ছোট বেলার এমন স্বপ্নগুলো কবে কবরে পাঠিয়েছেন বলতে পারবেন ? ছোট বেলা ম্বপ্ন গুলো দেখেছেন ঠিকই কিন্তু লালন করতে পারেন নি। অনিশ্চয়তা দেখে ইদুরের গর্তে মুখ লুকিয়ে বলছেন চাকুরীই তো ভাল। মাস গেলেই বেতন। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য, নিজে কিছু করার জন্য চেষ্টা করেছেন বিফল হয়েছেন। আর ফিরে এসে সেই হাল ধরতে পারেন নি। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই চাকুরী নামক নিরাপত্তার খোঁজে। কখনওবা নিজেকে সপে দিয়েছেন মৃত্যুর মুখে কিংবা হারিয়েছেন শেষ সম্বল ভিটা মাটি টুকুও প্রতারণায় পড়ে।
ঝুঁকি নিতে চান না কেন? একটা ঝুঁকি নিয়ে যদি জীবনের স্বাদ গ্রহন করা যায়, স্বপ্নগুলোকে আলোর মুখ দেখানো যায়, দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে কিসের এত ভয়। রোম যেমন একদিনে তৈরী হয়নি সফলতাও একদিনে আসবে না এটুকু বুঝতে কেন এত অসুবিধা হয়? ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকুন আপনার পছন্দের কাজ নিয়ে। শিক্ষাকে চাকুরী পাবার উপকরন হিসেবে না দেখে নিজেকে সমৃদ্ধ করার উপকরন হিসেবে গ্রহন করুন। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়তে আরও একবার ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করুন।
শিক্ষিত চাকর হওয়ার চেয়ে শিক্ষাকে নিজের কাজে লাগান। শিক্ষা যখন নিজের কাজে লাগাতে পারবেন তখন আপনি হবেন আপনার বস। আর কর্মসংস্থান হবে আপনার গড়া প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য মানুষের। আপনার ভেতরের ভীতি টাকে জয় করুন। যতক্ষন পর্যন্ত না অনিশ্চিয়তার মধ্যে নিশ্চয়তা খুজে নিতে না পারছেন ততক্ষন পর্যন্ত বড় কিছুর দেখা পাবেন না। বড় কিছু করতে গেলে স্রোতের বিপরীতে চলেই করতে হয়।
শিক্ষালব্ধ জ্ঞানকে নিজের জন্য কাজে লাগান চাকুরীর প্রত্যাশায় জুতার তলা ক্ষয় না করে। চাকুরী আপনাকে যা থেকে বঞ্চিত করেছে তা শুনলে আতকে উঠতে পারেন। চাকুরী আপনার সৃজনশীল সৃষ্টির ক্ষমতাকে গলাটিপে হত্যা করেছে। আপনার মধ্যকার উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনাকে নয়টা – পাঁচটার যাতাকলে ফেলে বড় হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ করেছে। যেখানে আপনি নিজেই নিজের বস হতে পারতেন সেখানে আপনাকে অন্যের চাকর করেছে। আপনার ভেতরের জেগে ওঠার ক্ষমতাকে দাসত্বে পরিণত করেছে। আপনার যে ছোট্টশিশুটি বাবা বাবা বলে আপনাকে কাছে পেতে চায় তাকে অতৃপ্ত করেছে।
নিশ্চিত কিছুর জন্য থাকলে তো অনিশ্চিতের সম্ভাবনা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই ভাবেন আর চাকরি বাকরি করব না। এবার নিজেই কিছু একটা করব। কিন্তু বের হয়ে আসতে পারেন না সেই নিরাপত্তার বৃত্ত থেকে। আবার অনেকেই বলেন চাকুরী জীবন শেষে পেনশনের টাকা দিয়ে শুরু করে অল্প দিনেই সেরা ধনী হয়ে যাব। কিন্তু তাদের দৌড় কতদুর? লাইফের ত্রিশটা বছরের যৌবন তো চাকুরী আপনার কাছ থেকে নিয়েই নিয়েছে। আপনার শক্তি, সামর্থ্য, মেধা, সময় কোনটাই চুষে নিতে ভুল করেনি আপনাকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আপনাকে যদি বিশ হাজার টাকা বেতন দিয়েছে তো তার বিপরীতে আপনাকে দিয়ে দুই লক্ষ টাকা আয় করে নিয়েছে।
জীবনটা চামচে মার্বেল রেখে দৌড় খেলার মতই। আপনি দৌড়ে প্রথম হলেও চামচ থেকে মার্বেল পড়ে গেলে আপনার অর্জন শূন্য। জীবনের উচ্ছাস-উত্তেজনা, অনুভূতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দাসত্ব থেকে আপনাকে মুক্ত হতে হবে। জ্বালানী বিহীন গাড়ির মত গতিহীন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ইদুরের গর্তে মুখ লুকিয়ে থাকা অনেক ভাল। নিরপত্তার জন্য সম্ভাবনাকে হত্যা করার কি দরকার। চেষ্টা করেই দেখুন। আপনার চেষ্টা আপনাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দরজা খুলেই রেখেছে। জীবনে বড় হতে হলে স্বপ্নবাজ হওয়া খুবই জরুরী।
অনেকে আমার মতের সাথে ভিন্নমত পোষন করতেই পারেন। তারপরও বলি বাবার টাকায় বড় হওয়া আর শুন্য হাতে স্বপ্ন লালন করে বড় হওয়া ভিন্ন ব্যাপার। সমাজের শ্রেনী বিভক্তির জায়গা থেকে একটি নিন্মবিত্ত বা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানকে কতটা বেশী ভাল থাকার অভিনয় করতে হয় তা একমাত্র সেই জানে। আবার সবচেয়ে হতাশার মধ্যে তারাই ডুবে থাকে।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে যাদের জন্ম নয় তারা যে জীবনে বড় কিছু করবে না তাও কিন্তু নয়। যারা জীবনে বড় হয়েছে তারা তাদের স্বপ্নকে লক্ষ ধরে নিয়েই কাজ করেছে। সেই সাথে পরিশ্রম আর লেগে থাকার বিনিময়ে সফলতাও পেয়েছে।
জীবনে বড় হতে হতে হলে অনেক শিক্ষিত হতে হবে এমন কথাও নেই। অনেক সল্প শিক্ষিত ঝরে পড়া ষ্টুডেন্টও জীবনে বড় কিছু করেছে। কারন তাদের স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাস ছিল আকাশের ওপারে। বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস – এই তিনজনের মধ্যে দারুন একটা মিল আছে। কোথায় জানেন ? তারা তিনজনই ইউনিভার্সিটি ড্রপ আউট স্টুডেন্ট। জাকারবার্গের তাও ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে, অন্য ২ জনের তাও নেই। এদের প্রত্যেকের সফলতার পেছনে ছিল জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন।
আন্ড্রু কার্নেগী গরীব ঘরের ছেলে ছিলেন। তিনি একটি খামারে কাজ করতেন। এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে তিনি আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন।
হলিউড অভিনেতা ব্রাড পিট প্রথম জীবনে ‘এল পল্লো লোসো’ নামের এক রেস্টুরেন্টে মোরগের ড্রেস পরে হোটেলবয় এর কাজ করতো।
টমাস এলভা এডিসনকে ছোটবেলায় সবাই বোকা এবং সেই সাথে গাধাও বলত । তিনি পড়াশোনায় একদমই ভালো ছিলেন না। তবুও তিনি একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হতে পেরেছিলেন।
বিস্ময়কর ফুটবলার “মেসি” যে কিনা একসময় নিজের ফুটবলের ট্রেনিং এর খরচ যোগাতে চায়ের দোকানে কাজ করতেন।
অনেকেই জানেন এইসব মানুষের সফল হওয়ার ইতিহাস কিন্তু সবাই মনে করেন এগুলো শুধুই অনুপ্রেরণার গল্প। যা শুধু পড়তেই ভালো লাগে কিন্তু নিজের জীবনে কাজে লাগানো সম্ভব না। অনেকেই বলবেন তখন সুযোগ ছিল এবং প্রতিযোগিতা কম ছিল তাই তারা সফল হয়েছিলেন কিন্তু আজকালতো সেই ধরনের সফলতা দেখা যায় না। আপনি আমি সবাই যদি একই কথা বলতে থাকি তাহলে বর্তমানে সফল হবে কে?
আজকে আপনি শুরু করুন দেখবেন ১০-১৫ বছর পর আপনার সফলতার গল্প অন্যরা পড়ছে। যেমনটি শুরু করেছিলেন মার্ক জাকারবার্গ ২০০৪ সালে, মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে তিনি আজ বিশ্বের সফল একজন উদ্যোক্তা। যখন মোবাইল আবিষ্কার হয় নাই তখন যদি আপনি বলতেন তারবিহীন টেলিফোন অর্থাৎ মোবাইল পকেটে নিয়ে ঘোরে বেড়াবেন তখন আপনি পাগল আর এখন আপনি মোবাইল ব্যবহার না করলে পাগল।
আজ থেকে ১৩ বছর আগে আপনি কাউকে যদি বলতেন সামাজিক একটা যোগাযোগ মাধ্যম থাকলে সবাই ব্যবহার করত তখন তিনি আপনাকে পাগল ডাকত কিন্তু এখন যদি বলেন আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন না তাহলে আপনাকে পাগল ডাকবে।
অর্থাৎ আজকে আপনি কোন ভিন্নধর্মী আইডিয়া কারো কাছে বললে আপনাকে পাগল ডাকবে কিন্তু ৪-৫ বছর পর সেই আইডিয়া অন্য কেউ সফল করবে এবং আপনি তা ব্যবহার করবেন আর ব্যবহার না করলে আপনি হবেন পাগল। এমন অনেকেই যারা ঠিক মত তিন বেলা খেতে পারেন নাই, খুব বেশী পড়াশুনা করতে পারেননি কিন্তু জীবনে স্বপ্ন লালন করতে ভুল করেন নাই এমন উদাহরন আমাদের সমাজেও কম নয়।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। কিন্তু সেই স্বপ্ন কি শুধু দেখলেই হবে ? স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে লেগে পড়ে কাজ করতে হবে। কাজকে ভালবাসতে হবে। ব্যর্থ হলেও থেমে না থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করতে হবে।
“ওটা স্বপ্ন নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন তা-ই যা তোমাকে ঘুমোতেই দেয় না।”- এ পি জে আব্দুল কালাম ।
সফলতা তো আমরা সবাই পেতে চাই। কিন্তু সফলতা বলতে জীবনের কোন পর্যায়কে বুঝাবেন আপনি? আপনি কিসে নিজেকে সফল মনে করবেন? বেশীরভাগ মানুষই বিশাল পরিমান অর্থবিত্ত আর সম্মানের অধিকারী হওয়াকে সফলতা মনে করেন। কিন্তু আসলে বিষয়টি কি সে রকম কিছু? সফলতা একটা যাত্রা যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। সফলতা মানুষের জীবনে বার বার আসে।
প্রথম যেদিন হাঁটতে শিখেছিলেন সেদিন আপনি সফল হয়েছিলেন, প্রথম যেদিন সাইকেল চালাতে শিখেছিলেন সেদিন সফল হয়েছিলেন, যেদিন সাঁতার কাটতে পেরেছিলেন সেদিন সফল হয়েছিলেন, যেদিন পড়াশুনা করে প্রথম সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন সেদিন সফল হয়েছিলেন, এভাবে প্রতিটা কাজের যেদিন সুখময় শুরু করতে পেরেছেন সেদিনই আপনি সফল হয়েছেন। তাহলে সফলতা সফলতা করে মাথা ঠুকার কি কারন?
এভাবে যদি হিসেব করেন তাহলে আপনার জীবনে হাতে গোনা কয়েকটি বিফলতা ছাড়া দেখবেন সফলতার পরিমানই বেশী। সত্যিকার অর্থে সফলতা হল আপনার জীবনের সেই সুখকর মুহুর্তগুলো যখন আপনি নতুন কিছু করতে পেরেছিলেন। আকাশের সীমানা আর সমুদ্রের বিশালতা যেমন পরিমাপ করা সম্ভব নয় ঠিক তেমনি আপনিও নিজেকে জীবনের কোন একটা পর্যায়ে এসে বলতে পারবেন না আমি সফল। তাই সফলতার যাত্রায় আপনি যতটা অর্জন দিয়ে সাজিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবেন ঠিক ততটাই সফল হবেন আপনি।
বাংলা অসম্ভব কথাটির ইংরেজী ইমপসিবল। এই ইমপসিবল শব্দটি বলে আমি পসিবল। একটু বুঝিয়ে বলি ইমপসিবল শব্দের প্রথম দুটি অক্ষর আলাদা করে উচ্চারণ করুন দেখুন তো আই এম পসিবল হয় কিনা। যদি তাই হয় তাহলে আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে আপনার দ্বারা যে কোন কাজ করা সম্ভব। কারন ইমপসিবল নিজেই বলছে আই এম পসিবল। আমি সম্ভব। তাহলে আপনি কেন অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারছেন না ?
আপনাকে থাকতে হবে পজেটিভ । মনে রাখতে হবে আপনি আত্মপ্রত্যয়ী মানুষগুলোর একজন সেই সাথে পথপ্রদর্শকও। আজ আপনি যে পথে সফলতা ছিনিয়ে আনবেন আপনার সেই পথ ধরেই আগামীতে চলবে অনেকেই । সুতরাং ব্যর্থতা আসুক হাজার কি যায় আসে সফলতা তার পিছু পিছু আসে…।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন :
আমাদের অনেকের ধ্যান ধারণা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কিংবা ব্যাংকার এ পেশাগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সফলতা। কিন্তু এ পেশার বাইরে যারা কাজ করছেন তারা কি? ছোট বেলা থেকেই আপনার মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এ সকল পেশায় সম্মান অর্থ দুটোই আছে। আপনার ভেতরের ঘুমন্ত প্রতিভাকে গলাটিপে হত্যা করা সেই সময়েই। তাহলে আপনি কিভাবে উদ্যোক্তা হবেন? বেরিয়ে আসুন বৃত্তের বাইরে যদি উদ্যোক্তা হতে চান। আপনার মেধা আর সাহস নিয়ে ঝুঁকি মোকাবেলা করতে শিখুন।
আমাদের অনেকের মনে আরও একটা অন্ধ বিশ্বাস জমে গেছে বা জন্মানো হয়েছে সেই বহু আগে থেকেই। যারা যে বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তারা সেই সেই সেক্টর নিয়ে কাজ করবেন। যারা ব্যবসায় শাখায় পড়াশুনা করেছেন শুধুমাত্র তারাই উদ্যোক্তা হবেন। আর যে ছেলে বা মেয়েটি মানবিক শাখায় পড়াশুনা করেছে সে তো সর্বোচ্চ গাধা।
বছর বছর ফেল করেছে। জগতের সবচেয়ে খারাপ এ জায়গার শিক্ষার্থীদের মনে করা হয়। কিন্তু কেন এ ধারনা? ক্লাশের সবচেয়ে খারাপ ছাত্র মার্ক জাকারবার্গ যার মাথা থেকে আসা আইডিয়া সারা বিশ্বের মানুষকে এক জায়গাতে এনেছে। সাথে তার আয় এখন যে পর্যায়ে তাতে সারা বিশ্বের শীর্ষ দশ ধনী ব্যাক্তির একজন সে।
আইনষ্টাইন যে কিনা নিজের বাড়ির নাম ঠিকানা মনে রাখতে পারতেন না সেই কিনা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রেখে গেছেন সর্বোচ্চ অবদান। আমাদের দেশের সফল ব্যবসায়ীদের অতীতের দিকে যদি তাকাই তাহলে তাদের অনেকেই শুধুমাত্র নিজের প্রচেষ্টায় সফল হয়েছেন। সিদ্ধান্ত এখন আপনার কাছে……….. আপনার নির্দেশকদের চাপিয়ে দেওয়া বোঝা বয়ে বেড়াবেন নাকি আপনি সেই গাধা ছাত্র হয়ে থাকার কলঙ্ক মুছবেন?
আপনার সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গী, অদম্য ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে সাহসী উদ্যোগ, কঠোর পরিশ্রম, সততা, আর ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকার মানসিকতা তৈরী করতে পারলেই হয়ে উঠতে পারবেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
আপনি নতুনত্বের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে সাহসী ভুমিকায় থাকুন। আপনার নতুন কোন আইডিয়া বদলে দিতে পারে শুধু আপনার জীবন নয় একটা জাতির জীবনধারা পর্যন্ত। পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলতে শিখুন। কারন পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পরিবর্তনের ধারা সমাজ ও সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে। আর এই সমৃদ্ধ ধারায় নিজেকে সংযুক্ত করে আপনি হয়ে উঠুন আগামীর উদ্যোক্তা।
আমার প্রিয় একজন গুণী এবং সফল বাক্তির উক্তি
চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দিব
এই উক্তিটি আমার কাছে অনুপ্রেরনীয় এবং প্রিয়। কিন্তু তার দ্বিতীয় আরেকটি উক্তি ছিল ‘চাকরি হল ডিজিটাল দাসত্ব’ ।
আমাদের দেশের চাকরি পাওয়া এক প্রকার সোনার হরিণের মত কারণ আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনুসারে চাকরির বাজার বা প্রতিষ্ঠান খুবই কম। বেসরকারি উদ্যোগ বা নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে না আসলে কোন সরকারের পক্ষেই সম্ভব না বেকার সমস্যা দূর করা। আর একটা দেশের জন্য সবচাইতে বড় সমস্যা হল বেকারত্ব।
উদ্যোক্তা না চাকুরী
বর্তমান শিক্ষিত তরুণদের লেখাপড়া করার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল ভাল একটা চাকরি করা, কারণ আমাদেরকে ছোট বেলা থেকেই গড়ে তোলা হয়েছে একটা ভাল চাকরি পাওয়ার জন্য। আর তাই আমরা পড়ালেখা শেষে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছি চাকরির জন্য,এই প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগাচ্ছেন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা। মানে এই অত্যধিক বেকারত্বের সুযোগটাকে বর্তমান ব্যবসায়ীরা কাজে লাগিয়ে চাকরিজীবীদের দাসের মত ব্যবহার করছেন।
অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ চাকরিজীবীদেরকে বেতন নামের সামান্য অর্থ দেওয়ার বিনিময়ে তাদের মূল্যবোধও কিনে নিচ্ছেন যার কারণে চাকরিজীবীরা একপ্রকার দাসের মতই ব্যবহার হচ্ছেন। আর উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরেও এই দাসের মত ব্যবহার হওয়াকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
যেহেতু আমি চাকরি করব না তাহলে আমাকে উদ্যোক্তাই হতে হবে আর উদ্যোক্তা হওয়া মানে কাউকে না কাউকে চাকরি দিতে হবে,আমি বা আমরা উদ্যোক্তা হলাম কি অন্যদেরকে দাস বানানোর জন্য? অবশ্যই না। আমরা চাকরি দিব ঠিকই কিন্তু দাসত্ব নয় –এই উক্তিকে কেন্দ্র করেই আমার বা আমাদের এগিয়ে চলা উচিত । কিন্তু কিভাবে?
বর্তমান তরুণদের হাতেই এদেশের ভবিষ্যত । তাই আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে ফলে বেকার সমস্যা লাঘব হয়ে দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হবে।
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা তৈরি হলেও সঠিক প্লাটফ্রমের অভাবে ঝরে যাচ্ছেন অনেকেই। এই ঝরে যাওয়া দেখে বাংলাদেশের তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য একটা প্লাটফ্রম তৈরি করা হয়েছে যার নাম “ চাঁদমামা” ।মূলত অনেক গুলো ভিন্ন ও বাস্তবধর্মী আইডিয়ার সমন্বিত নাম হল চাঁদমামা।
এই আইডিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সারা দেশ থেকে ১ লক্ষ তরুণ উদ্যোক্তা নিবে এবং তাদেরকে বিনিয়োগ ছাড়া মালিকানা দিচ্ছে চাঁদমামা। এতক্ষণ বলা হয়েছিল উদ্যোক্তা হতে মুলধন লাগে না,লাগে বুদ্ধি ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সেই কথার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল চাঁদমামা।
এবার আসা যাক আমার জীবনের কিছু কথায়, ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভাল ছাত্র ছিলাম, তাই আমার বাবার ইচ্ছে ছিল আমি ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমার ইচ্ছার পরিবর্তন হতে লাগলো। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখার ইচ্ছে আমাকে আর ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হতে দিলো না। এই কারণে বাবা আমার ওপর অনেকদিন রেগে ছিলেন ।
প্রাইভেট মেডিক্যাল এ ভর্তির সুযোগ থাকা স্বত্বেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম বাবার অনিচ্ছায়। যদিও চাকরি পছন্দ করি না তারপরও উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছেতেই পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ শেখার জন্য পার্ট টাইম চাকরি খুঁজে বের করলাম কিন্তু পরিবারের কাউকে চাকরীর কথা জানতে দেই নাই । চাকরি করলাম কিছুদিন তারপর ছোট ছোট কিছু ব্যবসা করার উদ্যোগ নিলাম সাথে নিলাম কিছু বন্ধু।
এই ছোট ছোট উদ্যোগ গুলো প্রথম দিকে ভাল ফলাফল না পেলেও লেগে ছিলাম আমি সঙ্গে ছিল বুকভরা সপ্ন, নিজের প্রতি বিশ্বাস, অদম্য পরিশ্রম ও ধৈর্য। ফলে উদ্যোগগুলো পরবর্তীতে পরিপক্কতা লাভ করে।
ক্লাসে নিজের গাড়ি নিয়ে অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষা দিতে যাওয়া একমাত্র ছাত্র ছিলাম আমি। তখন থেকে আজ অবধি আমি নিজেকে ব্যবসায়ীর চাইতেও উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করি। এসব কথা গুলো বলার কারণ একটাই আর তা হল ডিজিটাল দাসত্বকে আমি পছন্দ করি না।
চাকরি মানেই নিজের জীবনটা অন্যের হাতে তোলে দেওয়া, ৯-৫ টা চাকরি করে নিজের জীবনকে নির্দিষ্ট কিছু দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতি আমি নই । নিজের মেধা,শ্রম কাজে লাগিয়ে বেতনের চাইতে কয়েক গুণ বেশি আয় মালিক কে করে দিলেই আমরা সামান্য কিছু বেতন হিসেবে পায়। কিন্তু নিজের মেধা এবং শ্রম দিয়ে নিজস্ব উদ্যোগ গুলো বাস্তবায়ন করলেই আমরা নিজেদের সফল হিসেবে দেখতে পারবো ফলে আমরা নিজেরাই অন্যকে চাকরি দিতে পারব। এতে দেশে তরুণ উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়বে এবং বেকার সমস্যার সমাধান হবে।
একবার আমার ব্যবসায় সামান্য লোকসান হয় তখন আমার আব্বু বলেছিলেন, তোমাকে বলেছিলাম ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে এখন কি লাভ হল ? উত্তরে আমি বলেছিলাম আব্বু পরিকল্পনা করছি একটা হাসপাতাল করব যেখানে অনেক ডাক্তারকে চাকরি দিব (ডাক্তারদের ছোট করে এটা বলা হয় নাই)।
আমরা আমাদের স্বতন্ত্র ব্যবসায় আইডিয়া গুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেই ভাল কিছু করতে পারব। কারণ প্রতিটি মানুষের নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা/ আইডিয়া থাকে যারা এই আইডিয়া গুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে তারাই উদ্যোক্তা। অনেকেই ব্যবসায় পুঁজির কথা বলবেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি এই পৃথিবীতে আজ যারা সফল তাদের কারো কাছেই পর্যাপ্ত পুঁজি ছিল না। আপনার উদ্যোগ, শ্রম, সততা, একাগ্রচিত্ততা ঠিক থাকলেই আপনি সফল হতে পারবেন।কিছু ব্যাপার এক্ষেত্রে কাজ করে।
প্রথমেই আসে পরিশ্রমের ব্যাপারটা। যারা আপনার চাইতে এগিয়ে, তারা আপনার চাইতে বেশি পরিশ্রমী। এটা মেনে নিন।
ঘুমানোর আনন্দ আর ভোর দেখার আনন্দ একসাথে পাওয়া যায় না।
শুধু পরিশ্রম করলেই সব হয় না। তা-ই যদি হত, তাহলে রিক্সাওয়ালা হতেন সবচাইতে ধনী। শুধু পরিশ্রম করা নয়, এর পুরস্কার পাওয়াটাই বড় কথা।শুধু কাজ করলে হবে না, কাজকে ভালবাসতে হবে। যে কাজে আপনার ভালবাসা থাকবে না বা যে কাজ অন্তর থেকে করতে পারবেন না সেই কাজে কক্ষনো আপনি সফল হতে পারবেন না।
আমি দেখেছি দুই বন্ধু একই পোস্ট এ চাকরি শুরু করার দুই বছর পর এক বন্ধু ম্যানেজার আর ২য়জন একই পোস্ট এ থেকে গেছেন। কারণ ২য়জন চাকরি টাকে বোঝা মনে করতেন আর ১ম জন কাজটাকে মন থেকে ভালবেসে করতেন ।আপনাকে কাজে সময় দিতে হবে অনেক বেশী, সবার দিনই তো ২৪ ঘণ্টায়। আপনি বাড়তি কী করলেন, সেটাই ঠিক করে দেবে, আপনি বাড়তি কী পাবেন। আপনি ভিন্নকিছু করতে না পারলে আপনি ভিন্নকিছু পাবেন না।
বিল গেটস রাতারাতি বিল গেটস হননি। শুধু ভার্সিটি ড্রপআউট হলেই স্টিভ জবস কিংবা জুকারবার্গ হওয়া যায় না। বড় মানুষ হতে হলে প্রস্তুতিও বড় থাকতে হয় ।
নজরুলের প্রবন্ধগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন, উনি কতটা স্বশিক্ষিত ছিলেন। শুধু রুটির দোকানে চাকরিতেই নজরুল হয় না। কিংবা স্কুলকলেজে না গেলেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাওয়া যাবে না।
স্টুডেন্ট লাইফে কে কী বলল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। মানে হাসপাতালের মালিক হতে হলে ডাক্তার হতে হবে এমন কোন কথা নাই। যাকে নিয়ে কেউ কোনদিন স্বপ্ন দেখেনি, সে এখন হাজার হাজার মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। ক্যারিয়ার বা লেখাপড়া নিয়ে যার তেমন কোন ভাবনা ছিল না, সে সবার আগে পিএইচডি করতে আমেরিকায় গেছে।
সব পরীক্ষায় ফেল করা ছেলেটি এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। আপনি কী পারেন, কী পারেন না, এটা অন্য কাউকে ঠিক করে দিতে দেবেন না।
পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাননি? প্রাইভেটে পড়ছেন? কিংবা ন্যাশনাল ভার্সিটিতে? সবাই বলছে, আপনার লাইফটা শেষ? আমি বলি, আরে! আপনার লাইফ তো এখনো শুরুই হয়নি। আপনি কতদূর যাবেন, এটা ঠিক করে দেয়ার অন্যরা কে? লাইফটা কি ওদের নাকি?
আমাদের দেশের মানুষদের সফল হওয়ার জন্য ২টা বাধা অতিক্রম করতে হয়, প্রথম এবং ছোট বাঁধা হলাম আমরা নিজেরা কারণ ছোট বেলা থেকেই “না” শুনতে শুনতে আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস খুবই কম ফলে কোন কাজ করার আগেই আমরা মেনে নিই যে এই কাজ আমার দ্বারা হবে না ।
আমাদের এই বাঁধা অতিক্রম করারপর ২য় এবং সবচাইতে বড় বাঁধা হল আমাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন,বন্ধুবান্ধব ও আশেপাশের পরিচিত ও প্রিয়জন। আমরা কোন কাজ করার পরিকল্পনা করলেই কেউ না কেউ এসে বলবে এই কাজ তোমাকে দিয়ে হবে না,তুমি এই কাজ পারবে না,তোমার মধ্যে এই কাজ করার গুণ নাই।
এই বাঁধা অতিক্রম করা খুবই কঠিন,কিন্তু আপনি যদি জিজ্ঞাস করেন কেন আমি পারব না? তখন উনাদের কাছে কোন উত্তর পাবেন না যদিও কেউ উত্তর দেয় দেখবেন কত হাস্যকর সেই উত্তর। যেমন – তুমি পারবা না কারণ অমুকের ছেলে তমুক পারে নাই। আরে ভাই একজন পারে নাই বলে যে আপনি পারবেন না এমন কোন কথা আছে নাকি?
ছোট বেলা থেকেই পরিবার এবং শিক্ষক সবার একটাই কথা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে কিন্তু কেন?
সফল উদ্যোক্তার গুনাবলী :
পৃথিবীর সফল ব্যাক্তি সবাই কি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার? কিংবা ডাক্তারি পাস করে কেন ডাক্তারিই করতে হবে? আমার পরিচিত এক ডাক্তার ফটোগ্রাফি করে মাসে আয় করে ৭-৮ লাখ টাকা। আপনার ফটোগ্রাফি ভাল লাগে কিন্তু যদি ডাক্তারি পড়েন তাহলে আপনি কক্ষনো সফল ডাক্তার হতে পারবেন না। যেখানেই পড়াশোনা করেন না কেন, আপনার এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করে আপনার নিজের উপর। আপনি যার উপর ডিপেনডেন্ট, তাকে বাদ দিয়ে নিজের অবস্থানটা কল্পনা করে দেখুন।
যে গাড়িটা করে ভার্সিটিতে আসেন, ঘোরাঘুরি করেন, সেটি কি আপনার নিজের টাকায় কেনা? ওটা নিয়ে ভাব দেখান কোন আক্কেলে?
একদিন আপনাকে বাস্তবতাই নামতে হবে। তখন আপনাকে যা যা করতে হবে, সেসব কাজ এখনই করা শুরু করুন। জীবনে বড় হতে হলে কিছু ভাল বই পড়তে হয়, কিছু ভাল মুভি দেখতে হয়, কিছু ভাল মিউজিক শুনতে হয়, কিছু ভাল জায়গায় ঘুরতে হয়, কিছু ভাল মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কিছু ভাল কাজ করতে হয়।
একদিন যখন জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, তখন দেখবেন, পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। স্কিল ডেভেলাপমেন্টের জন্য সময় দিতে হয়। এসব একদিনে কিংবা রাতারাতি হয় না। আর আমার জীবনের এইসব বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এমন একটা বাস্তবধর্মী আইডিয়া তৈরি করা হল যা বাস্তবায়ন করা খুবই সহজ এবং সফলতার পরিমাণ অসীম।
কার্টেসিঃ সংগৃহীত