একজন আদর্শ বিক্রয় কর্মীর গুণাবলীঃ যে গুণ না থাকলে আপনি ভালো সেলসম্যান হতে পারবেন না

একজন আদর্শ বিক্রয় কর্মীর গুণাবলীঃ

  • পণ্যের কৌশলগত অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা
  • পণ্যের জীবন চক্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা
  • পণ্যের বৈশিষ্ট ও সুবিধা সম্পর্কে ধারনা
  • পণ্যের ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা
  • পণ্যের উৎপাদন পদ্ধিতি সম্পর্কে ধারনা
  • পণ্যের ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারনা
  • প্রতিযোগী পণ্যের সম্পর্কে ধারনা ( আইটেম ১-৬ পর্যšত সব কয়টা তথ্য)
  • সম্ভাব্য ক্রেতার তালিকা হাতে পাওয়া
  • সম্ভাব্য ক্রেতার সরবরাহকারীর তালিকা হাতে পাওয়া
  • সম্ভাব্য ক্রেতার ক্রয় স্বভাব ও শর্তাবলী জানা
  • সম্ভাব্য ক্রেতার প্রভাবকারী উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা
  • সম্ভাব্য ক্রেতার আপনার পন্য সম্পর্কে কি প্রকারের বিরূপ ধারনা হতে পারে, সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা
  • অর্ডার ফর্ম সঙ্গে রাখা
  • ক্রেতার আচরনগত শ্রেনী বিভাগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন পোষাক আশাক, বাচন ভঙ্গী ও অন্যান্য যোগাযোগ কৌশল স্থির করা
  • বিক্রয়োত্তর সেবার কি কি নিশ্চয়তা আপনার প্রতিষ্ঠান দিতে সক্ষম এবং কি কি সেবা দেশের অন্যত্র পাওয়া যায় সে সম্পর্কে পরিস্কার জ্ঞান।
  • আপনার পরিচিতি পত্র

ভালো সেলসম্যান হওয়ার উপায় কি?

  • সহজ সরল কিন্তু বুদ্ধিমান
  • মনোযোগী শ্রোতা
  • সহানুভূতিশীল হওয়া
  • ক্রেতাকে কথা দিয়ে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা
  • পণ্য সম্পর্কে সার্বিক ধারণা/জ্ঞান/দক্ষতা
  • কর্মতৎপরতা
  • নিয়মনিষ্ঠ
  • কথার বরখেলাপ না করা।
  • ক্রেতার চাহিদা ও আর্থিক সক্ষমতা অনুধাবন করা
  • নিজের ও ক্রেতার উভয়ের লাভ দেখা
  • সৃজনশীলতা
  • বিক্রয় করার জন্য দৃঢ়তিজ্ঞ হওয়া
  • আবেগপ্রবণ না হয়ে পড়া।
  • ক্রেতাকে পর্যবেক্ষণ করার সামর্থ
  • সুনাম তৈরী করা
  • সততা
  • বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা
  • নতুন নতুন ক্রেতা খুঁজে বের করা
  • সঠিক পরিকল্পনা করা
  • নতুন কিছু শেখার মানষিকতা
  • নিজস্ব ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব তৈরীর চেষ্টা করা
  • সময় সম্পর্কে সচেতন থাকা

একজন বিক্রয়কর্মীর অনেক গুণাবলী থাকতে পারে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কর্মী তার গুণাবলীগুলোকে ব্যবসায় প্রয়োগ করছেন কিনা।প্রয়োগ করতে হলে একজন বিক্রয়কর্মীর পণ্য বিক্রয়ে গুণাবলী প্রয়োগের কৌশলসমূহ জানতে হবে।

একজন ভাল সেলসম্যান অবশ্যই নিুলিখিত সব ধরণের ক্রেতার সাথে লেনদেন করার মানসিকতা থাকতে হবে। এবং এ ধরনের মানসিকতা বর্জন করতে হবে-

  • অধৈর্য্য
  • নাক উঁচু ভাব
  • চুপচাপ
  • খিটখিটে মেজাজের
  • অভিজ্ঞ ক্রেতা
  • বিভিন্ন বয়সের ক্রেতা
  • পুরুষ, স্ত্রীলোক
  • বাচাল
  • মধ্যস্ত কারবারী, পাইকারী বিক্রেতা
  • যুক্তিবাদী
  • অবিশ্বাসী
  • সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা
  • ভীরু, লাজুক
  • আবেগতাড়িত
  • অসত্যবাদী
  • খামাখা ঘোরাফেরা করা

দর কষাকষি :

পন্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দর কষাকষির বিষয়টি নির্ভর করে বিক্রেতার উপর যেহেতু তিনি পণ্যটির বিক্রয়মূল্য আগেই নির্ধারণ করে থাকেন। ভাল সেলসম্যান মনে রাখতে হবে:

  • একজন ক্রেতা তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
  • ক্রেতা, বিক্রেতার উপর কোনভাবেই নির্ভরশীল নয়।
  • বরং বিক্রেতা পণ্যের ক্রেতার উপর নির্ভরশীল।
  • ক্রেতা বিক্রেতার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে না।
  • বিক্রেতার ব্যবসায় ক্রেতা আগন্তুক নয় বরং সে ব্যবসার অংশীদার।
  • পণ্যটি বিক্রয় করে বিক্রেতা ক্রেতাকে কোন আনুকূল্য প্রদর্শন করছেনা।
  • পণ্য বিক্রয় করে বিক্রেতা লাভ করে নিজেই আনুকুল্য নিচ্ছে।

ক্রেতাকে পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করার কৌশলসমূহ:

  • সেলসম্যান এর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব উপস্থাপন।
  • পন্যের মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিতকরণ।
  • বিক্রোয়ত্তর সেবার প্রতিশ্র“তি প্রদান।
  • এই বিশ্বাস তৈরী করা যে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুইজনেই লাভবান হবেন।
  • পণ্যটি পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া।
  • ক্রেতার প্রতি শ্রদ্ধাভাব প্রদর্শন করা।
  • মূল্য পণ্যের সাথে ফ্রি পণ্য প্রদান।
  • বিশেষ উৎসবে ও ঋতুতে হঠাৎ করে মূল্য হ্রাস দেয়া।
  • পণ্য ক্রয়ের ছাড়/কমিশন প্রদান করা।
  • কিস্তিতে ক্রয়ের সুযোগ দেয়া।
  • শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা।

অভিযোগ সমাধানঃ

আপত্তি হলো সম্ভাব্য ক্রেতা পণ্য ক্রয়ের পূর্বে পণ্য ক্রয় না করার জন্য যে “না” বলে তাহাই আপত্তি। ক্রেতা “না” বলার অর্থই হলো বিক্রেতাকে ধরে নিতে হবে পণ্যটি ক্রয়ে ক্রেতার আগ্রহ আছে। মাঝে মাঝে মিথ্যার সাথে অনেকে  অনুমানের ভিত্তিতেও আপত্তি/অভিযোগ করে থাকে। এক্ষেত্রে বিক্রেতার দায়িত্ব হলো প্রমাণ করা যে, ক্রেতার অভিযোগটি ঠিক নয়।

সাধারণতঃ যে সকল কারণে একজন ক্রেতা আপত্তি করেনঃ

  • পণ্যটি ক্রয়ে আর্থিক সক্ষমতা না থাকা।
  • অনেক ক্ষেত্রে পণ্যটির প্রয়োজনই নেই।
  • আরো তথ্য জানার চেষ্টা করা।
  • এটাই ঐ ক্রেতার আচরণ ও মানষিকতা।

একজন ক্রেতা সাধারণতঃ যে সকল বিষয়ে অভিযোগ করেনঃ

  • মূল্য
  • পণ্য
  • সেবা
  • কোম্পানী
  • বিক্রেতার আচরণ

আপত্তি বা অভিযোগ নিরসনে কৌশল ও গৃহীত পদক্ষেপসমূহঃ

  • অভিযোগ করার সময় শান্ত থাকা।
  • মনোযোগ দিয়ে শোনা।
  • অভিযোগ করার মাঝখানে কথা না বলা।
  • সহানুভূতি প্রকাশ করা ও অসুবিধা হয়েছে এটা প্রকাশ করা।
  • ধৈর্য্য সহকারে ও যুক্তি দিয়ে অভিযোগ খন্ডন করা কারণ বিক্রেতাকে মনে রাখতে হবে অভিযোগটি বিক্রেতার উপর নয় পণ্য/সেবার উপর।
  • ক্রেতাকে অভিযোগটি গুছিয়ে বলতে সাহায্য করা।
  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অভিযোগ নিরসন করা।

আপত্তি/অভিযোগ নিরসনকালে একজন ভাল সেলসম্যানকে বিশ্বাস করতে হবে, পণ্য/সেবার ক্ষেত্রে অভিযোগ সত্য এবং অভিযোগ সফলভাবে নিরসন করার উপর তার ব্যবসার সুনাম নির্ভর করছে।

 সেলস বৃদ্ধির কৌশল (সেলস টিপস)

  • প্রতিযোগী পণ্য বিক্রয়কারীদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা বা তথ্য সংগ্রহ।
  • একই পণ্য বিভিন্ন মানের রাখা
  • বিভিন্ন কোম্পানীর পণ্য প্রদর্শনের জন্য সাজিয়ে রাখা
  • ব্যবসা প্রসারের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবস্থা করা
  • পণ্য বিক্রয়কে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয়া
  • ভবিষ্যৎ দেখতে পারার ক্ষমতা ও কল্পনাপ্রবণ হওয়া
  • একটি ভাল ভাবমূর্তি তৈরী করা
  • কথা ও আচরণে যুক্তি দিয়ে কথা বলা
  • নির্দিষ্ট সময়ে এসে বিক্রয় উপস্থাপনার সমাপ্তি টানা

এছাড়াও বিক্রয় কৌশলকে AIDA এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়-

  • A-Attention> ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষন করা।
  • I-Interest> ক্রেতার মধ্যে পণ্যটির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা।
  • D-Desire> ক্রেতার মধ্যে পণ্যটি অর্জন করার ইচ্ছা তৈরী করা।
  • A-Action> ক্রেতাকে পণ্যটি ক্রয় করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা।

-একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে যে, “একজন দক্ষ বিক্রেতা এস্কিমো বা মেরু অঞ্চলের বাসিন্দার কাছেও রেফ্রিজারেটর বিক্রি করতে পারেন”।

একজন আদর্শ বিক্রয় কর্মীর গুণাবলী অর্জন করুন, বিক্রয় প্রসার করুন। 

আরও পড়ুন…..

একজন বিক্রয় কর্মীর গুণাবলী

 

 

Leave a Comment