ব্যবসায় যোগাযোগ কাকে বলে? ব্যবসায় যোগাযোগের ধরনসমূহ

ব্যবসায় যোগাযোগ কাকে বলে?

ব্যবসায়ের উদ্দশ্যে যে যোগাযোগ করা হয় তাকে ব্যবসায় যোগাযোগ বলে। মূলত ব্যবসা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই যোগাযোগ করা হয়। যোগাযোগের বিভিন্ন নাধ্যম আছে যেমনঃ

  • ভিজুয়্যাল যোগাযোগ
  • ধ্বনির সাহায্যে যোগাযোগ
  • স্পর্শের সাহায্যে যোগাযোগ
  • গন্ধের সাহায্যে যোগাযোগ
  • লেখার সাহায্যে যোগাযোগ

যোগাযোগ পত্রের প্রকারভেদ (Classes of Communication letters):

বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতির দিক থেকে বিচার বিশ্লেষণ করিলে নিম্নলিখিত বিভিন্ন প্রকারের পত্র দেখিতে পাই :

  • আনুষ্ঠানিক পত্রাবলী :

ক) বাণিজ্যিক পত্র

খ) অফিসিয়াল ও ডেমি অফিসিয়াল পত্র

গ) বিজ্ঞপণ ও প্রচারলিপি

ঘ) বিজ্ঞপ্তি, প্রতিবেদন, নির্দেশনা ইত্যাদি ।

   ২) অনানুষ্ঠানিক পত্রাবলী :

         ক) ব্যক্তিগত পত্রাবলী

খ) সামাজিক পত্রাবলী (জন্ম দিবস ও বিবাহের দাওয়াত পত্র ইত্যাদি)

বাণিজ্যিক পত্রের কাঠামো বা বিভিন্ন অংশ (Structure of different parts or a Business letter ): একটি বাণিজ্যিক পত্রের বিভিন্ন অংশকে নিম্নোক্তরুপে ভাগ করিতে পারি :

  1. শিরোনাম (The Heading)
  2. আভ্যন্তরীন ঠিকানা (The Inside Address)
  3. বিষয় শিরোনাম (The Subject Heading)
  4. সম্বোধন (The Greeting on Salutation)
  5. বিষয়বস্তু (The Body)
  6. বিদায় সম্ভাষণ (The Complementary close)
  7. স্বাক্ষর (The Signature)
  8. অনুলিপি (Copy)
  9. সংযুক্তি (The Enclosure)

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে যোগাযোগের গুরুত্বঃ

দক্ষ তত্বাবধায়ক হতে হলে প্রতিষ্ঠানে তত্ববধায়কের বিশেষ কতগুলো বিষয়কে বিবেচনায় আনতে হবে।এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় সমূহ নিম্নরুপঃ

ক) নির্দেশ বা তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে যতটুকু বলা প্রয়োজন ততটুকুই প্রদান করতে হবে

খ) কর্মীর আগ্রহের বিষয়টিকে বিবেচনায় আনতে হবে

গ) প্রশ্নের মাধ্যমে বুঝাতে হবে যা বলা হয়েছে তা কর্মী সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে কি না

ঘ) সাধারণতঃ ব্যবসায়িক কাজে কর্ম বা করনীয় কি তা পরিস্কার করতে হবে

ঙ) প্রথমেই বেশী  যুক্তি তর্কের অবতারনা না করে বিষয়টি ভাল ভাবে শুনতে হবে

চ) বক্তাকে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য যথেষ্ঠ সুযোগ দিতে হবে

ছ) বিষয়টি নিয়ে সহ কর্মীর সাথে কথা বলতে হবে, চিন্তা করতে হবে এবং কাজ করার পদ্ধতি ঠিক করুন

জ) বক্তার বা বক্তব্য পছন্দ না হলে বিরক্ত সহকারে শ্রবণ না করা

একটি আদর্শ দাপ্তরিক চিঠির বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরুপঃ

যোগাযোগের অনেক মাধ্যমের মধ্যে চিঠিপত্র লিখন পদ্ধতি অন্যতম। প্রাচীনকাল থেকে এ পদ্ধতির ব্যবহার মানুষ করে আসছে। বিশেষ করে দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রে চিঠিপত্র লিখন পদ্ধতির মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

আমরা জানি যে চিঠিপত্র ০৩ (তিন) প্রকার যথা ঃ (ক) ব্যক্তিগত চিঠি, (খ) দাপ্তরিক চিঠি ও (গ) স্মারক লিপি (ব্যাখ্যা প্রদান)। প্রসংগত কারণে আমরা দাপ্তরিক চিঠিপত্র বিষয়ক আলোচনার সুত্রপাত করছি। ব্যবসা সংক্রান্ত/দাপ্তরিক কার্যাদী সম্পাদনের জন্য প্রেরক প্রাপকের উদ্দেশ্যে যে চিঠিপত্র লেখে তাকে ব্যবসায়িক চিঠিপত্র বলে। প্রতিষ্ঠান তার প্রচলিত রীতি ও পলিছি অনুযায়ী বিভিন্ন ষ্টাইলে চিঠিপত্র লিখনের কাজটি করে থাকে। চিঠিপত্র লিখনের ধরন ও নমুনার উদাহরণ নিম্নে প্রদান করা হলো।

একটি আদর্শ দাপ্তরিক চিঠির বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরুপঃ

  • চিঠির মধ্যে বর্ণিত বিষয়াদি (Points) পরিস্কার (Clear) হতে হবে।
  • সহজ ও সংক্ষিপ্ত ভাবে বোধগম্য ভাষায় ব্যবসায়িক চিঠি লিখতে হবে।
  • ব্যক্তিগত মন্তব্য পরিহার করা উচিত।
  • চিঠি অবশ্যই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও এর একটি উপসংহারমূলক (Conclusive) বক্তব্য থাকতে হবে।
  • চিঠির বিষয়বস্তুতে পূর্ণাঙ্গভাবে যাওয়ার পূর্বে সংক্ষেপ (Key Words) তার বিষয় লিখতে হবে।
  • চিঠির মধ্যে প্রয়োজনে ছোট ছোট প্যারায় তা লিখতে হবে।
  • চিঠির শব্দ ও বাক্য বিণ্যাস সঠিক হতে হবে।
  • চিঠির মধ্যে সংশ্লিষ্ট নথির নেটশীটে গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতিফলন থাকতে হবে।
  • আঞ্চলিক শব্দ, ভাষা ইত্যাদি পরিহার করা উচিত।
  • চিঠি লেখার সময় কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পরিহার করা উচিত।
  • নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার ইত্যাদির প্রতিফলন ঘটিয়ে চিঠি খিলতে হবে।
  • চিঠি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা, উপদেশ/পরামর্শ, আদেশ বা অনুরোধের মাধ্যমে (Direction, Advice, Instruction or Request) পরিসমাপ্তি করতে হবে।

চিঠিপত্র প্রেরক যখন লেখে তখন তাকে কতকগুলী মৌলিক বিষযের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। চিঠির মৌলিক বিষয়গুলো হলো নিম্নরুপঃ

  1. চিঠি লেখার সময় অবশ্যই এর প্রাপক সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। প্রাপকের অবস্থান, ভাষাজ্ঞান, সময়, পরিবেশ, তার করনীয় কি তা অবশ্যই চিন্তার মধ্যে এনে চিঠি লিখতে হবে।
  2. মনে রাখতে হবে চিঠি একটি লিখিত দলিল এটি ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে। তাই চিঠি লেখার সময় অবশ্যই চিন্তাভাবনা করে লিখতে হবে।
  3. চিঠি খুবই সহজ ভাষায় সাধারণ ভাবে লিখতে হবে (Be Simple)|
  4. চিঠি লেখার সময় অবশ্যই সম্ভাষণ (Address) করতে হবে।
  5. চিঠির গঠণপ্রক্রিয়া যেন ঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল লাখতে হবে।
  6. তারিখ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে, কারন এত সময় ও প্রেক্ষিত প্রাপক বুঝাতে পারবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
  7. পত্রের সংশ্লিষ্টতা অন্য পত্রের সাথে থাকলে ধারাবাহিকতা বা ঘটনার প্রেক্ষিতে বিবেচনায় আনার জন্য সূত্র উল্লেখ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  8. পত্রের মূল বিষয় হচ্ছে চিঠির লিখিত পূর্ণাঙ্গ বিবরণ (Details Text)| প্রেরক যে বিষয়টি প্রাপককে অবগতি বা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলে তা এ পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গভাবে লিপিবদ্ধ করতে হয়।
  9. পত্র লেখার পর অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় যে তাড়া-তাড়ি, অসাবধানতা বসত অনেক সময় প্রেরক তা  খসড়া অবস্থায় প্রাপক বরাবরে প্রেরণ করে থাকে। দাপ্তরিক চিঠিপত্রের ক্ষেত্রে বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই যেন খসড়া পত্র প্রাপকের উদ্দেশ্যে না প্রেরণ করা হয়, সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
  10. দাপ্তরিক চিঠি প্রাপক বরাবরে প্রেরণের সময় স্মরন রাখতে হবে যে, পত্রে উল্লেখিত বিষয় বস্তুর সাথে আরও কোন সংশ্লিষ্টতা বা করনীয় কিছু রয়েছে কিনা। যদি কাকেও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিতকরণ বা তার পক্ষ থেকে করনীয় কিছু থাকে তবে তাকে উক্ত চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করতে হবে।
  11. চিঠি প্রেরণের সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা বা প্রয়োজনীয় তথ্য থাকলে এক বা একাধিক চিঠি বা তথ্য পত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। প্রদত্ত সংযুক্ত কাগজের সংখ্যা পত্রের নীচে সংযুক্তি কথাটি লিখে সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে।

দাপ্তরিক পত্রে পরিহার্য বিষয়াদি নিম্নরুপঃ

  1. চিঠি লেখার সময় শুদ্ধ করে লিখতে হবে, সাধু ও চলিত ভাষায় যেন মিশ্রন না ঘটে সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
  2. ব্যাকরণ জ্ঞান সঠিক রেখে চিঠি লেখা বাঞ্চনীয়।
  3. চিঠিতে অনেকে বিভিন্ন বাগধারা, বাগবিধি উল্লেখ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ভুল ব্যবহার করা যাবে না।
  4. যতদুর সম্ভব চিঠিতে জটিল বাক্য ব্যবহার পরিহার করতে হবে। অব্যয় যত কম ব্যবহার করা যায় ততই উত্তম।
  5. দাপ্তরিক চিঠিপত্রে প্রত্যক্ষ উক্তি পরিহার করা উচিত।
  6. উদহারণ দিয়ে চিঠি লেখা ঠিক নয়। বিষয় বস্তু পরিস্কার, বোধগম্য করে প্রাপকের উদ্দেশ্যে তা লিখতে হয়। অন্য কারো উদহারণ পরিহার করতে হবে।

বাণিজ্যিক পত্র  (Commercial letter):  বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লিখিত পত্রই বাণিজ্যিক পত্ররুপে পরিচিত । অর্থাৎ ব্যবসায় বাণিজ্যও লেনদেন সম্পর্কে লিখিত পত্রকে বানিজ্যিক পত্র বলা হয় । ক্রয় – বিক্রয় কার্য সম্পাদন ও দেনা -পাওনা আদায় ও পরিশোধের ব্যাপারে বানিজ্যিক পত্রের অবতারনা করা হয় । অধ্যাপক হেনসনের মতে“  The letters which are exchanged among businessmen in connection with business affairs are called business letter”  মোট কথা ব্যবসা- বানিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত পত্রকে বানিজ্যিক পত্রকে বানিজ্যিক পত্র বলে” অর্থাৎ যে, পত্রের মাধ্যমে কারবার সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ স্থাপন করা হয় তাহাকে বাণিজ্যিক পত্র বলে ।

বাণিজ্যিক পত্রের উদ্দেশ্য গুরুত্ব ( objective & importance of commercial letter):

  1. খবরাখবর ও তথ্যাদির আদান প্রদানের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা ।
  2. ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ ।
  3. চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্চস্য বিধান করা ।
  4. সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করা ।
  5. স্থায়ী দলিল হিসাবে সংরক্ষণ ।
  6. ব্যয় সংকোচন ।
  7. সময় বাচানো ও শ্রম লাঘব করা ।
  8. পরস্পর লেন – দেনের নিস্পত্তি করা ।
  9. মূলধন সংগ্রহে সহায়তা করা ।
  10. সুনাম বৃদ্ধি করা ।
  11. ভ্থল বোঝাবোঝি ও বিবাদের অবসান ইত্যাদি ।

Leave a Comment