বাংলাদেশের পণ্যের মান এবং শিল্প কারখানায় পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য

বাংলাদেশের পণ্যের মান এবং শিল্প কারখানায় পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য

সূচনা ; উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে এবং সঠিক পরিমানে সঠিকমানের পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা। বর্তমান বিশ্বে মুক্তবাজার ব্যবস্থায় কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অবশ্যই ভাল মানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে। ভাল কথাটি আপেক্ষিক। আমার কাছে যা ভাল অন্যের কাছে তা ভাল নাও লাগতে পারে।

কাজেই পছন্দ অপছন্দ বা ভাল মন্দের, অনেক ক্ষেত্রেই, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে তারতম্য হয়। তা সত্ত্বেও আদর্শ মানের পণ্য বা সেবা সবার কাছেই সমাদৃত। এটি ভোক্তাদের চাওয়া মিটায়, তৃপ্তি ও সন্তুষ্টি বিধান করে। শিল্প-কারখানা, বাণিজ্যিক এবং সেবাদানকারী সংস্থা, হাসপাতাল, হোটেল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানসমূহ ভোগকারী বা ক্রেতাদেরকে আদর্শ মানের পণ্য সেবা সরবরাহ করে নিজেদের সফল অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। হোটেলে আধুনিক সরঞ্জামাদি ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকলেই চলেনা। সেই সঙ্গে গ্রাহকদেরকে প্রদত্ত সেবার মানও উন্নত বা আদর্শ হতে হবে। ‘হোটেল -বয়রা’ অপরিচ্ছন্ন বা আদব কায়দা বিবর্জিত হলে হোটেলের আধুনিক সরঞ্জামাদি কোন কাজে আসবে না। সুতরাং পণ্য বা সেবা যা -ই হোক না কেন, তা অবশ্যই ক্রেতাদের মনমত ও সন্তিুষ্টি বিধানযোগ্য হতে হবে। এই কারণেই পণ্য বা সেবার মান নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। পণ্যমান ও নিয়ন্ত্রণ ও দুটি শব্দ নিয়ে ‘পণ্যমান নিয়ন্ত্রণ’ কথাটি গঠিত। নিম্নে মান নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশের পণ্যের মান বা কোয়ালিটি কন্টোল:

পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের অর্থ জানার আগে মানের অর্থ এবং নিয়ন্ত্রণের অর্থ জানা দরকার। পণ্য বা সেবার উপযোগিতাই হচ্চে এর মান। মানুষ পণ্য বা সেবা ভোগ করে তা থেকে কতটুকু সুফল বা তৃপ্তি পেল তা বিবেচনা করে সে তার মান বিচার করবে। কোন পণ্যের ব্যবহার যোগ্যতাকে অনেকে তার মান বলে বিবেচনা করেন। পণ্যমান অবশ্যই ভোক্তাদের চাওয়া মিটাতে সক্ষম হবে। আদর্শ পণ্যমান ভোক্তাদের ‘চাওয়া-পাওয়ার’ মধ্যে সর্বাধিক সামঞ্জস্য বিধান করবে। ক্রেতা সন্তুষ্টি শুধুমাত্র উচ্চ-মান পণ্যের উপরই নির্ভর করবে না। এর সাথে পণ্য-মূল্যও একটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয় বলে গণ্য হবে।

সুতরাং পণ্যমান বলতে একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের বৈশিষ্ট্যের সাথে সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করাকে বোঝায়। যে সকল বৈশিষ্ট্যের উপর পার্থক্য বিদ্যমান থাকে এবং যা পণ্যের মান হিসাবে বিবেচিত তা হচ্ছে  পণ্যের দর্শন, আকার, স্থায়িত্ব, রং, স্বাদ, গন্ধ, নির্ভরযোগ্যতা, সংরক্ষন যোগ্যতা, রাসায়নিক মিশ্রন ইত্যাদি।

অপরদিকে, যে প্রক্রিয়া বা কৌশলের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত বিবরণ অনুযায়ী কোন কাজ সুসম্পন্ন করা যায় তবে সে প্রক্রিয়া বা কৌশলকে সাধারণ অর্থে  নিয়ন্ত্রন বলা হয়। সঠিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলে কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কাজেই পণ্যমান অর্জনের কৌশল বা প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে পণ্যমান নিয়ন্ত্রণ বলা যেতে পারে। সঠিক মানের পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার নিমিত্ত গৃহিত ও অনুসৃত ব্যবস্থাবলীকেও মান নিয়ন্ত্রন বলা যায়। পরিনত পণ্যের মান পূর্ব-নির্ধারিত মান মোতাবেক হবে এটাই উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কাম্য। পরিনত পণ্যের মান পূর্ব-নির্ধারিত মান অপেক্ষা নিকৃষ্ট হবে তা যেমন ব্যবস্থাপনার কাম্য নয়, এর মান পূর্ব-নির্ধারিত মান অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হতে হবে তা-ও ব্যবস্থাপনার কাম্য নয়। নিকৃষ্ট মানের পণ্য ক্রেতাদের চাহিদা মোচন ও সন্তুষ্টি বিধান করতে পারে না। তাই এটি গ্রহণযোগ্য না।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মান অপেক্ষা উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করতে গেলে এর উৎপাদন ব্যয় ও সেই সঙ্গে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাবে। এই পরিস্থিতিও গ্রাহক সন্তুষ্টির বিপক্ষে যায়। খুব বেশী দাম দিয়ে ক্রেতারা পণ্য খরিদ করতে চায় না। কাজেই উৎপাদকের পক্ষে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে। মান নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংগা হচ্ছে, পণ্যের পূর্ব নর্ধারিত গুণাগুণ পরিমাপ ও প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ যেন তা সংরক্ষণ ও কার্যকর হয়। তা’ছাড়া অনেক লেখক, ক্রেতার ফরমায়েশে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করার কৌশলকে মান নিয়ন্ত্রণ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। বস্তুত উক্ত সংগা দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যেমন, একটিতে বলা হয়েছে “পূর্ব-নির্ধারিত গুণাগুণ” এবং অপরটিতে “ক্রেতার ফরমায়েশে- বর্ণিত বিবরণ”। উভয়েই সুুনির্দিষ্ট মান বলে বিবেচিত। তবে পণ্যের মান ক্রেতার পছন্দ, রুচি-বৈচিত্র্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই নির্ধারণ করা হয়।

পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক: মান নিয়ন্ত্রণের চারটি দিক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

পণ্যনীতি ও গুণাগুণ: প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে গুণাগুণ সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ জাতীয় নীতিমালা বাজার ধারণার সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যেমন – ক্রেতারা পণ্যের মানকে কিভাবে পরিমাপ করে থাকে, পণ্যের বহিরাকৃতি, নমুনা, নির্ভরশীলতা, টেকশই না অন্যকিছু ? এগুলোর সাথে উৎপাদন খরচের কি জাতীয় সম্পর্ক রয়েছে ? তা’ছাড়া বিনিয়োগকৃত মূলধনের উপর কতটুকু লাভ পাওয়া যাবে ? এ সকল এবং অন্যান্য অবস্থার কথা বিবেচনা করেই প্রতিষ্ঠানকে পণ্যমান ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। মান নিয়ন্ত্রণে এ দিকটাই হলো মূলভিত্তি।

গুণাগুণ ও পণ্য নমুনা: উৎপাদনযোগ্য পণ্যের গুণাগুণের বিস্তারিত বর্ণনার উপর ভিত্তি করে পণ্য নমুনাকারী প্রয়োজনীয় মালামাল নির্ধারন করে থাকে। বস্তুত কি উৎপাদন করা হবে, তার সাথে উৎপাদন খরচের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই গুণাগুণ নমুনা, উৎপাদনযোগ্য পণ্যের নমুনা, উৎপাদন পদ্ধতির নমুনা প্রত্যেকটি এক অপরের উপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে।

উৎপাদন মান নিয়ন্ত্রণঃ সাধারণ অর্থে মান নিয়ন্ত্রণ বলতে যা বোঝায়, এটা তাই। বাস্তবে উৎপাদন মান নিয়ন্ত্রণে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপ-পর্যায় রয়েছে। যেমন- (ক) সংগৃহীত কাঁচামালের পরিদর্শন এবং গুণাগুণ পরীক্ষা, (খ) পণ্য পরিদর্শন এবং প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং (গ) পণ্যের অগ্রগতি পরীক্ষা এবং পরিদর্শন। এ তিনটি উপ-পর্যায়ে পরিদর্শন এবং পরিসংখ্যাত্মক মান নিয়ন্ত্রণ কলা কৌশল প্রয়োগ করা হয়।

বিতরণ এবং ব্যবহার মান নিয়ন্ত্রণ: মান নিয়ন্ত্রণে পণ্যনীতি, পণ্য ডিজাইন এবং উৎপাদন মান নিয়ন্ত্রণের দ্বারা সমাপ্ত হয় না। মান নিয়ন্ত্রণ বিতরণ এবং ব্যবহার পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। কারণ ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছা পর্যন্ত মান নিয়ন্ত্রণ না করা হলে অনির্ধারিত মানের পণ্য বাজারে প্রবাহিত হতে পারে, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর ব্যাপার। কাজেই, উৎপাদনের পর ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত কার্যক্রম সামগ্রিক মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভক্ত হওয়া বাঞ্চনীয়।

পণ্যমানে প্রভাবিতকরণ উপাদান: নিম্ন বর্ণিত উপাদানগুলো পণ্যমানে প্রভাব বিস্তার করে থাকেঃ
(১)  বাজার (২) মানুষ/ কর্মী (৩)অর্থ (৪)  ব্যবস্থাপনা (৫) মালামা (৬)  মেশিন ও পদ্ধতি (৭) বিবিধ/অন্যান্য বিষয়।

পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যসমূহ: যে সকল উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলে –

(১) পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো এমন একটি নমুনা তৈরী করা যা ক্রেতার চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য থাকে। ফলশ্র“তিতে প্রতিষ্ঠান বাজারে এক অনন্য স্থান দখল করতে সমর্থ হয়।(২) পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নষ্টের পরিমানকে কমানো সম্ভব। ফলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়।
(৩) ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধানও পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বিক্রিত মাল যেন ফেরত না আসে বা ক্রেতার ফরমায়েশে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী মাল উৎপাদিত হয় তা নিশ্চিত করা।
(৪) উৎপাদিত পণ্যমানে সমতা ও স্থিতিশীলতা আনয়ন করা।
(৫) পরিদর্শন কার্যক্রমকে অধিক দক্ষ করা যেন উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে উৎকর্ষতা যাচাই করা হয়।
(৬) কাম্যমানের নীচে উৎপাদিত পণ্যকে বর্জন করার ব্যবস্থা করা।(৭) উৎপাদিত পণ্যের গড় মানকে উন্নত করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা মান

নিয়ন্ত্রণের একটি উদ্দেশ্য। মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কয়েক মাস অন্তর অন্তর বা বৎসরান্তে পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের সীমা পরিমাপ করা দরকার। বৃহদায়তন উৎপাদন কার্যক্রমের ফলে আজকাল পরিসংখ্যাত্মক কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়। তা’ ছাড়া আধুনিক যুগে কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পর্যায় পরিমাপ করে দেখা হয়।

শিল্প কারখানায় মান নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব: প্রত্যেক শিল্প প্রতিষ্ঠানেই মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে যে সব প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতামূলক দ্রব্যাদি উৎপন্ন হয় সেই প্রতিষ্ঠানেই মান নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উৎপাদিত পণ্যই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সহায়তা করে।

তা’ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধি ও সুনাম অর্জনে পণ্য একমাত্র উৎস। এ কারণে যে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তার উৎপাদিত পণ্য বা সেবার মান অক্ষুন্ন তথা বৃদ্ধির প্রয়োজন অপরিহার্য। একটি প্রতিষ্ঠান পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দ্বারা যে সকল সুফল ভোগ করে থাকে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো

(১) উৎপাদন ব্যয় হ্রাস: মান নিয়ন্ত্রণের দ্বারা পরিদর্শন কার্যকে জোরদার করা হয়ে থাকে। ফলে ত্র“টিপূর্ণ উৎপাদনের সংখ্যা হ্রাস পায়। ত্র“টিপূর্ণ পণ্যের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে উৎপাদন ব্যয়ও বহুলাংশে হ্রাস পায়।

(২) পণ্যমানে সমতা আনয়ন: পণ্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এমনকি বিতরন এবং ব্যবহারের পূর্ব স্তর পর্যন্ত মান নিয়ন্ত্রন কার্যত্রম অব্যাহত থাকে বিধায় পণ্যমানে অসমতা দুরীভূত হয়। ইহাতে পণ্যমানের তারম্য হয়না। ফলে পণ্যের প্রতি ভোক্তা বা ক্রেতার ধারণা অপরিবর্তিত থাকে যা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের জন্য মূলধন স্বরূপ।

(৩ ) পণ্যমানে স্থিতিশীলতা বাজায়: কোন প্রতিষ্ঠান যদি একই মানের বা গ্রেডের পণ্য উৎপাদন কার্যে লিপ্ত থাকে তবে মান নিয়ন্ত্রণ দ্বারা উক্ত পণ্যের গুণাগনে স্থিতিশীলতা বাজায় রাখা সম্ভব

(৪ ) ব্যবহার্য মালামালের মান বৃদ্ধি: পণ্যমানে সমতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার নিমিত্তে ব্যবস্থাপকগণ উৎপাদন উপকরনসমূহের মধ্যে সমতা রক্ষার চেষ্টা করেন। ফলে প্রক্রিয়াজাতকরনের পূর্বে সংগৃহীত মালামালের গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা করা হয় এবং নিম্নমানের মাল বাদ দেওয়া হয়। ব্যবহার্য মালামালের এ জাতীয় গুণাগুণ পরীক্ষার ফলে মালের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়।

(৫) অপ্রয়োজনীয় কার্য পরিহার: মান নিয়ন্ত্রণের ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রথম স্তর থেকে শেষ স্তর পর্যন্ত পণ্যের মান যাচাই করা হয়। ফলে কোন স্তরে পণ্যের মান অগ্রহণযোগ্য মনে হলে পরিদর্শক তা পরবর্তী স্তরের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখে।

(৬) প্রকৌশল জ্ঞানের উন্নয়ন: পণ্যমানের নমুনা অনুসারে প্রকৌশল কার্য-সাজানো অত্যন্ত জটিল ব্যাপার। বিভিন্ন মানের পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে নতুন নতুন প্রকৌশল ধারণার উদ্ভব হয়। ফলশ্র“তিতে প্রকৌশল কার্যক্রম সহজতর ও উন্নত হয়ে থাকে।

(৭) ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধান: কি ধরণের ভোক্তার উদ্দেশ্যে পণ্য উৎপাদন করা হবে প্রতিষ্ঠান তা পূর্বাহ্নেই নির্ধারণ করে থাকে। গবেষণার দ্বারা সাধারণত ক্রেতার রুচি-বৈচিত্র্য, রং, আকার, মূল্য ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তারই ভিত্তিতে পণ্যমান নিয়ন্ত্রণ করা হয় ফলে অধিক সংখ্যক ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধান হয়ে থাকে।

(৮) প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি: পণ্য বা সেবার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান জনসম্মূখে পরিচিতি লাভ করে। মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পণ্যের গুণগত উৎকর্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে থাকে। পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের অব্যাহত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে।

(৯) উৎপাদক-ভোক্তা সম্পর্ক উন্নয়ন: সঠিক মানের পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। মান নিয়ন্ত্রণ পণ্যের গুণাগুণ স্থিতিশীল পর্যায়ে রেখে উৎপাদক ও ভোক্তার মাঝে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে থাকে।

(১০ ) সামাজিক মূল্য: উৎপাদনকারীগণ শুধুমাত্র মুনাফা অর্জন করার জন্যই পণ্য উৎপাদন করে না। তাঁরা ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্য সরবরাহ করে সমাজেরও মঙ্গল সাধন করে থাকেন। কতগুলি দ্রব্য আছে যে গুলির মান নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন – খাদ্য দ্রব্য, ঔষধপত্র, শিশুখাদ্য ইত্যাদি। সুতরাং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে

(১১) গ্রাহক সংরক্ষণ ও গ্রাহক বৃদ্ধি: গ্রাহকদের তৃপ্তিদানের উদ্দেশ্যে এবং বর্তমান গ্রাহকদের সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবস্থাপনাকে দ্রব্যের মান সমন্ধে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হয়। উন্নতমানের দ্রব্য শুধু বর্তমান ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান করে না ইহা ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

উপসংহারে বলা যায়, মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কম খরচে উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন তথা উৎপাদনশীলতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা একান্ত বাঞ্চনীয়।

Leave a Comment